বীরপাড়ায় সর্বাত্মক বন্ধ, গৃহস্থের উনুনে চড়ল না হাঁড়ি, সমর্থন বিজেপি-তৃণমূলের
বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: দলগাঁও রেলস্টেশন থেকে ডলোমাইট সাইডিং অন্যত্র সরানোর দাবিতে বীরপাড়ায় সর্বাত্মক বন্ধ হল। ২৪ ঘণ্টার এই বন্ধ-এর জেরে হাটবাজার, অফিস কাছারী, স্কুল ও কলেজ সব ছিল শুনসান। চলেনি যানবাহনও। তবে হাসপাতাল, অ্যাম্বুল্যান্স ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যকে বনধের আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। বন্ধ এতটাই সর্বাত্মক ছিল যে, বন্ধের সমর্থনে বীরপাড়ার শহরের অনেক বাড়িতেই এদিন হাঁড়ি চড়েনি। গৃহবধূ অনিতা পাশোয়ান, হীরামনি লাকড়া ও ফুলমনি লোহার বলেন, ডলোমাইটের জন্য বাচ্চাদের চোখের সমস্যা বাড়ছে। তাই এই ইস্যুতে এদিন আমরা অরন্ধন পালন করি।
ভয়েস অব বীরপাড়া নামে অরাজনৈতিক একটি সংগঠনের ডাকে এদিন এই বন্ধ হয়। অরাজনৈতিক সংগঠন বন্ধ ডাকলেও তাতে নৈতিক সমর্থন জানায় বিজেপি ও তৃণমূল।
ভুটান থেকে প্রতিদিন ২২৫-২৩০টি লরি-ডাম্পার ডলোমাইট এনে দলগাঁও রেল স্টেশনে জমা করে। সেখান থেকে রেল প্রয়োজন মতো এই ডলোমাইট অন্যান্য স্টেশনে পাঠায়। বীরপাড়ার লঙ্কারোডে যানজট এড়াতে জেলা পুলিসের উদ্যোগে ডলোমাইটবোঝাই ডাম্পারগুলিকে দিনের বেলার বদলে এখন রাতে চালানো হচ্ছে। এতে বীরপাড়া শহরের যানজট কমেছে বটে, কিন্তু স্থানীয়দের দাবি দলগাঁও স্টেশনে ডলোমাইটের সাইডিংয়ের জেরে শহরের বাতাসে এতবছর ধরে বিষ ছড়াচ্ছে। অভিযোগ, ডলোমাইটের গুঁড়োর জন্য এখন বীরপাড়ার ঘরে ঘরে শ্বাসকস্ট, হাঁপানি, মারণ কাশি, ব্রঙ্কাইটিস ও নানা ধরনের কাশি সহ নানা রোগ ছড়াচ্ছে। একই দাবি স্বাস্থ্যদপ্তরেরও।
ভয়েস অব বীরপাড়ার সভাপতি চতুর পানোয়ার বলেন, সেই কারণেই তো সংঠনের তরফে বুধবার এই বনধ্ ডাকা হয়েছিল। বন্ধ সর্বাত্মক হওয়ায় আমরা খুশী। দলগাওঁ স্টেশন থেকে ডলোমাইট সাইডিং অন্যত্র সরানো না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব।
এদিন বীরপাড়ায় এই বনধ্কে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিধায়ক তথা মাদারিহাট ব্লক সভাপতি জয়প্রকাশ টোপ্পো বলেন, দলগাঁও স্টেশনে ডলোমাইটের সাইডিংয়ের জন্য এলাকায় নানা ধরনে ব্যধি বাড়ছে। তাই আমারা বন্ধকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ডলোমাইটের কারণে বীরপাড়ার মানুষের এই সমস্যা নিয়ে বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা এতদিন উদাসীনতা দেখিয়েছে। যদিও এলাকার এমপি মনোজ টিগ্গা বলেন, এই অভিযোগ ঠিক নয়। আমাদের দলেরও দাবি দলগাঁও স্টেশন থেকে ডলোমাইটের সাইডিং অন্যত্র সরানো হোক। সেই জন্য তো বন্ধ আমাদের দলও সমর্থন জানিয়েছে।
যদিও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিআরএম অমরজিৎ গৌতম বলেন, এখানে রেলের ভূমিকা নেই। ডলোমাইটের জন্য বীরপাড়ায় দূষণ হচ্ছে না। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও শংসাপত্র সেই দিয়েছে। তবে ডলোমাইট সাইডিংয়ের জন্য বিকল্প জমিও দেখা হচ্ছে। বন্ধে বন্ধ দোকানপাট। বীরপাড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।