চরম প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে চিকিৎসক হওয়ার পথে কস্তুরী বর্মন
বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
মনসুর হাবিবুল্লাহ, দিনহাটা: সংসার আর্থিক অনটনে জর্জরিত। তবুও চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন সিতাইয়ের জাটিগারার কস্তুরী বর্মন। সেই ছাত্রীর কথাই স্কুলের ‘অ্যানুয়াল অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার’-এ তুলে ধরেছে গোপালনগর এমএমএস হাইস্কুল।
ছেঁড়া কাথায় শুয়ে সেই স্বপ্নের সঙ্গী ছিলেন কস্তুরীর মা হরিমতিদেবী। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ২০২০ সালে গোপালনগর এমএমএস হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন কস্তুরী। মেয়েকে পড়াতে শহরে এসে থাকা শুরু করেছিলেন তাঁর মা-ও। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে কস্তুরীর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। পরীক্ষার দেড়মাস আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হন হরিমতিদেবী। অসুস্থ মা’কে নিয়ে শহর ছেড়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে। কিছুদিনের মধ্যে মাতৃবিয়োগ হয়। বাড়ির কাজ সামলানোর পাশাপাশি পড়াশোনাতেও মনোযোগ দেন। সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ২০২২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৫০০-র মধ্যে ৪৭৯ নম্বর পেয়ে নজর কেড়েছিলেন কস্তুরী বর্মন। এরপর শুরু হয় আরও কঠিন লড়াই। মায়ের স্বপ্ন পূরণের সংকল্প নিয়ে কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যান তিনি।
অবশেষে ২০২৪ সালে নিট উত্তীর্ণ হয়ে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পান কস্তুরী। বর্তমানে সেই কলেজেই পড়ছেন। আর্থিক অনটন, মাতৃবিয়োগ কোনও কিছুই লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি তাঁকে। তাঁর লড়াইকে সম্মান জানিয়ে গোপালনগর এমএমএস হাইস্কুল তাদের ২০২৫ সালের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে স্থান দিয়েছে কস্তুরীর জীবন সংগ্রামের কাহিনি। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের হাতে সেই ক্যালেন্ডার তুলে দেওয়া হয়েছে এপ্রিল মাসের শুরুতেই।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আক্কাজ আলি বলেন, চরম প্রতিকূলতায় মানুষ নিজের ভাগ্য নিয়ে নিরাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু কস্তুরীর অদম্য মানসিকতা সমাজের কাছে অনন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। তাই প্রাক্তনী পড়ুয়ার লড়াইয়ের গল্প ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ নিয়েছি।
স্কুলের আরএক শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর স্কুলের অ্যানুয়াল অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রধান শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়। এ বছর স্কুল রাজ্য সেরা হয়েছে। সেই কথার পাশাপাশি কস্তুরীর জীবনকথাও ক্যালেন্ডারে স্থান পেয়েছে। কস্তুরীর সংগ্রাম যেন জীবনের কাছে মাথা নত না করার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। তাঁর কাহিনি পড়ুয়াদের কাছে নিঃসন্দেহে এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠবে।
কস্তুরী বলেন, এখনও লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথ অনেকটাই বাকি। স্কুল আমাকে যে সম্মান দিয়েছে তাতে আমি আরও সাহস পেলাম। সকলের আশীর্বাদ চাই। নিজস্ব চিত্র।