• সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই চলছে শাঁখ কাটা, নকশা তোলা, বাড়ছে রোগ ব্যধির বিপদ
    বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ডোমকল: টিনের ছাউনির তলায় এক মনে শাঁখ কেটে যাচ্ছেন ওঁরা। পাশেই বছর পঞ্চান্নর প্রৌঢ় নিপুণ হাতে নকশা তুলছেন শ্বেতশুভ্র শঙ্খের মসৃণ গায়ে। সামুদ্রিক শঙ্খের ঝাঁঝালো গন্ধে চারিদিক ভরে উঠেছে। শঙ্খের সুক্ষ্ম ধূলিকণায় বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। হাত, পা, মুখের উপর মোটা আস্তরণ পড়েছে। মুখে না আছে মাস্ক, না হাতে গ্লাভস। শাঁখের গুড়ো শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সরাসরি ফুসফুসে ঢুকছে। বাড়ছে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। তবে মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকলেও মাস্ক পরতে অনীহা অনেকেরই। ডোমকল পুরসভার বাজিতপুর, লক্ষ্মীনাথপুরজুড়ে কয়েক হাজার শাঁখারি পরিবারের বাস। দুই ওয়ার্ডের বেশিরভাগ পরিবারই শঙ্খশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এখানকার শঙ্খ রপ্তানি হয় নেপাল, বাংলাদেশেও। কিন্তু যাঁদের জন্যে ডোমকলের শঙ্খশিল্পের এই সুনাম, তাঁরা যে কোনও সময়ে আক্রান্ত হতে পারেন জটিল রোগে। শঙ্খ কাটা ও তার ওপরে নকশা তৈরির সময়ে মাস্ক না পরায় বাড়ছে এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শঙ্খ কাটা ও তাতে নকশা ফুটিয়ে তোলার সময় প্রচুর পরিমাণে সূক্ষ্ণ ধূলিকণা বাতাসে ছড়ায়। ওই সময়ে মাস্ক না পরে থাকলে  শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ধূলিকণা সরাসরি প্রবেশ করে শরীরে। দীর্ঘদিন ধরে ধূলিকণাযুক্ত বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, কাশি, বুকে ব্যথা এবং ক্লান্তির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। পরবর্তীতে তা শরীরে আরও মারাত্মক আঘাত হানতে পারে। দেখা দিতে পারে ফুসফুসের নিউমোকনিওসিসের মতো রোগ। সেখান থেকে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি ও বেসরকারি স্তরে এই শিল্পে শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষা কর্মসূচি অনুপস্থিত। সচেতনতা কম থাকায় শ্রমিকদের অনেকেই জানেন না, তাঁরা কী ধরনের বিপদের মধ্যে রয়েছেন। ডোমকল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক বরুণ বিশ্বাস বলেন, যারা নির্মাণশিল্প, খনিশিল্প বা পাথরের কাজ করেন তাঁদের সিলিকোসিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। শঙ্খ কাটার সময়ে শঙ্খের গুঁড়ো শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ওই রোগ হতে পারে। শাঁখার কাজ করার সময়ে কর্মীদের অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস পরে কাজ করা উচিত। সাকলাইন মুস্তাক নামে এক কর্মী বলেন, আমরা এভাবে বিনা মাস্কেই কাজ করি। শুনেছি এতে শরীরের ক্ষতি হয়। তবে এই ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার যে আশঙ্কা রয়েছে তা জানতাম না। আর গরমে মাস্ক পরে কাজ করতেও অস্বস্তি লাগে। 

    যদিও শঙ্খ ব্যবসায়ী ঋজু পাল বলেন, কর্মীদের মাস্ক, গ্লাভস পরায় অনীহা আছে। আমি নিজে আমার কর্মীদের গ্লাভস, মাস্ক দিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা ব্যবহার করতে রাজি হয়নি। মহকুমা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, আমাদের এখানে শঙ্খশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের কোনও সংগঠন নেই। কাজেই আলাদা ভাবে নজরদারি কিংবা সচেতনার পাঠ দেওয়া সমস্যার। তবে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমাদের তরফে কর্মীদের এ বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা চালানো হবে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)