তামার গয়না তৈরির করে হাল ফিরছে কেশপুরের আয়মাগ্রামের বাসিন্দাদের
বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
রাজদীপ গোস্বামী, আনন্দপুর: ছোট্ট গ্রামে সারাদিন ধরেই কর্মব্যস্ততা লেগেই থাকে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তামার গয়না তৈরির কাজ। গ্রামের পুরুষ ও মহিলারা নিত্য-নতুন ডিজাইনের গয়না তৈরি করেন। তা বিক্রির জন্য চলে যায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। এমদকী, দেশে-বিদেশেও। যা থেকে স্বনির্ভর হচ্ছেন কেশপুর ব্লকের আনন্দপুর থানার কোঙরের আয়মাগ্রামের বাসিন্দারা। সামনেই পয়লা বৈশাখ আসছে, তাই গ্রামে কর্মব্যস্ততা তুঙ্গে। অর্ডার অনুসারে তাঁরা তৈরি করছেন গয়না। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরে তামার গয়না তৈরির চল রয়েছে। সেই একইভাবে গয়না তৈরি হচ্ছে আনন্দপুর থানা এলাকায়। এখন রাজ্যব্যাপী বিভিন্ন মেলা হওয়ায় আগের তুলনায় তামার গয়না বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। এই হস্তশিল্পের বিকাশ হওয়ায় বাড়ছে কর্মসংস্থান। গ্রামের যুবকরাও এই হস্তশিল্পের কাজ শেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
কোঙরেরআয়মা গ্রামের শিল্পী স্বরূপ ঘোষ গয়না তৈরির ফাঁকে বলেন, সোনার দাম প্রচণ্ড বেশি। তাই অনেকের সোনার গয়না ব্যবহার করার ইচ্ছে থাকলেও পড়তে পারেন না। তাই তাঁরা সাধ্যের মধ্যে তামার গয়না পড়েন। ভালোই বিক্রি হয়, তাই পরিবারের বেশিভাগ সদস্য এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি বলেন, জেলার প্রচুর গ্রামের মানুষ বিভিন্ন হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বনির্ভর হচ্ছেন। গ্রামে গ্রামে তৈরি জিনিস দেশে-বিদেশে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে থাকবে। প্রসঙ্গত, একসময় গোটা কেশপুর ব্লকজুড়েই রাজনৈতিক হানাহানি লেগে থাকত। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি বদলেছে। এলাকায় শান্তি ফিরে আসায় হস্তশিল্পীদের পরিচিতি বাড়ছে। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে কোঙরেরআয়মা গ্রামের বাসিন্দারা তামার গয়না তৈরি করে আসছেন। গত কয়েকবছরে তাঁদের শিল্পকলার উন্নতি হয়েছে। শিল্পীরা জানান, তামার গয়না তৈরির কাজ খুব সহজ বিষয় নয়। প্রথমে তামা কিনে আনেন গ্রামের বাসিন্দারা। তা থেকে তৈরি হয় গয়না। বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিডের মিশ্রণ তৈরি করে গয়না পালিশ করার কাজ করেন শিল্পীরা। এক শিল্পী বলেন, এই গয়না তৈরির জন্য তামা ছাড়াও বিভিন্ন ধাতুর ব্যবহার হয়ে থাকে। আগে ১২০ টাকা কেজি দরে তামা কেনা হতো। কিন্তু এখন এক হাজার টাকা কেজি দরে তামা কিনতে হয়। এর ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া গয়না তৈরির উপাদানেরও দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই গ্রামে তামার নেকলেস, হার, কানের দুল তৈরি হয়। ডিজাইন অনুসারে আসে অর্ডার। একটি তামার গয়না পাইকারিতে ৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। জটিল ডিজাইন হলে দাম আরও বাড়ে। শিল্পী মনোজ খাঁড়া, সুশান্ত খাঁড়া বলেন, আমাদের মার্কেটিং খুবই দুর্বল। সরকারের সাহায্য পেলে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে। -নিজস্ব চিত্র