কাটোয়ায় গাজন সন্ন্যাসী ও শ্মশান বোলানের জন্য ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের মুণ্ড, খুলি
বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: চৈত্রমাসে শিবের গাজনে শ্মশান খেলার রীতি বরাবরই আছে। শিব যেহেতু ভূত-প্রেত নিয়ে থাকতেন, তাই মহাদেবকে তুষ্ট করতেই মড়ার খুলি, মুণ্ড নিয়ে শ্মশান জাগানো রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এবার কাটোয়া শহরে দেদার বিক্রি হচ্ছে ‘মুণ্ডু’! এক-একটি মুণ্ড বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। তবে তা আসল নয়, নকল প্লাস্টিকের মুণ্ডর চাহিদা বেড়েছে। কোনও মুণ্ড থেকে আবার বেরিয়ে আসে ভৌতিক শব্দ। সেগুলি কিনতে দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন গাজন সন্ন্যাসী থেকে শ্মশান বোলান শিল্পীরা। পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিভিন্ন এলাকায় মড়ার খুলি, মুণ্ড নিয়ে গাজনে শ্মশান খেলার রীতি রয়েছে। প্রাচীন এই প্রথা কুড়মুন, কড়ুই সহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে। সেই রীতি বজায় রাখার জন্য বাজারে চলে এসেছে প্লাস্টিকের মুণ্ড। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা থেকে বিভিন্ন সাইজের মুণ্ড রাজ্যে আসছে। আর গাজনের আগে সেসব দেদার বিক্রি হচ্ছে।
কাটোয়া শহরের ডাবপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী গোপাল বৈরাগ্য বলছেন, এখন তো আর আসল নরমুণ্ড নিয়ে খেলা সম্ভব নয়, তাই প্রথা বজায় রাখতে প্লাস্টিকের মুণ্ড নিয়েই গাজন উৎসব পালিত হচ্ছে। প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। দিনে গড়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি করে প্লাস্টিকের মুণ্ড বিক্রি হচ্ছে। একেবারে অসল নরমুণ্ডের মতো দেখতে। দাঁত, মুখের আদল এক্কেবারে কঙ্কালের মতই৷ কিছু মুণ্ডে আবার সাউন্ড ও আলোর সিস্টেম রয়েছে। ব্যাটারি সংযোগ করলেই নানা রকম ভৌতিক শব্দ শুনতে পাওয়া যাবে। গাজনে কেউ কেউ পিশাচের বেশে নরমুণ্ড, খুলি ইত্যাদি নিয়ে নৃত্য করেন। কেউ কেউ আবার ডাকিনি যোগিনী সাজে আচার পালন করেন। সে সবেরও ভালো বিক্রি হচ্ছে। আরেক ব্যবসায়ী পর্ণাভ বৈরাগ্য বলেন, গাজনে সন্ন্যাসীদের সাজের সমস্তটাই ভালো বিক্রি হচ্ছে৷ নকল গোঁফ থেকে বোলান শিল্পীদের সাজ— সবই বিক্রি হচ্ছে। কাটোয়ার শ্রীখণ্ডে ডাকিনি সাজে বাবা ভূতনাথের শ্মশান খেলা হয়। শহরে বোলান শিল্পীরাও শ্মশান বোলান বা পোড় বোলান গাওয়ার জন্য নকল মুণ্ড কিনছেন। কেতুগ্রামের বোলান শিল্পী দুঃখহরণ মাঝি, উদয় মাঝি বলেন, এখন নরমুণ্ড প্রকাশ্যে এনে খেলা যায় না, তাই তো আমরা প্লাস্টিকের মুণ্ড নিয়েই বোলান গান গাইব।-নিজস্ব চিত্র