• জমিজট কাটলেই ১০ হাজার কোটি বিনিয়োগ হলদিয়ায়
    বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: বাংলায় শান্তি আছে বলে অগ্রগতি হচ্ছে। বাংলায় হতাশাগ্রস্ত হওয়ার কোনও জায়গা নেই। বুধবার হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত সাংস্কৃতিক উৎসবের শিল্প ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সেমিনারে এসে এই বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এ প্রসঙ্গে তিনি হলদিয়ার একাধিক শিল্প সংস্থার সম্প্রসারণে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাবের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে রাজ্যেই কাজের সুযোগ বাড়ছে বলে তিনি স্কুল কলেজের পড়ুয়া এবং চাকরিপ্রার্থী তরুণ প্রজন্মকে আশ্বস্ত করেছেন। মন্ত্রীর দাবি, সদ্য শেষ হওয়া আর্থিক বছরে সারা দেশের নিরিখে পশ্চিমবাংলায় ৪০ শতাংশ বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। পুরমন্ত্রী বলেন, বাংলায় ব্যবসা বাণিজ্য ভালো বলেই জিএসটি আদায় সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে বাংলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। প্রশ্ন উঠতে পারে, বড় শিল্পে কেন বাংলা এক নম্বর নয়। তিনি বলেন, হেভি ইন্ডাস্ট্রি বা বড় শিল্প গড়তে যে ছাড় বা আশীর্বাদ লাগে, সবই গুজরাতের দিকে চলে গিয়েছে। তাই অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে বাংলাও বঞ্চিত হচ্ছে।  আইওসি সহ হলদিয়ার যে সমস্ত ছোট ও বড় শিল্প সংস্থা রয়েছে, এদিন তাদের সম্প্রসারণের জমি নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন পুরমন্ত্রী। তিনি বলেন, হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এইচডিএ) ল্যান্ড ব্যাঙ্কের জমিতে ‘ওয়াটার বডি’ নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। ওই বিষয়টি শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে শিল্প বিনিয়োগ তদারকির জন্য একটি স্পেশাল টিম তৈরি করেছেন। সেই টিমের সদস্য পুরমন্ত্রী। কোথাও শিল্প স্থাপনে বা অগ্রগতিতে কোনও সমস্যা হলে তা মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি রিপোর্ট করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব। ফলে রাজ্যের শিল্প বিষয়ক স্পেশাল টিমের সদস্য হিসেবে এদিন ফিরহাদ হাকিম হলদিয়ার শিল্প প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করায় তাঁদের স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়েছে। কারণ এইচডিএর বোর্ড মিটিংয়ে পাশের পর প্রায় দেড় বছর ধরে জমির প্রস্তাব রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। এইচডিএর চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় কর বলেন, অনেকগুলি শিল্প সংস্থা জমি চেয়েছে। অনেকদিন ধরে সেগুলি বিলম্বিত হয়েছে। এজন্য কাউকে দোষারোপ করা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে একটি টেকনিক্যাল ত্রুটি থেকে গিয়েছিল। এইচডিএর চেয়ারম্যান বলেন, জমি অধিগ্রহণের সময়ে ব্যক্তিগত জমি বা পুকুরের মতো ওয়াটার বডি সবই এইচডিএর ল্যান্ড ব্যাঙ্কে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী জমির ব্যাপারে খুবই সতর্ক। শিল্প সংস্থাকে জমি দিতে চায় রাজ্য, তবে ওয়াটার বডির কনভারসান বা চরিত্র বদল করা যাবে না। এইচডিএর চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার দপ্তরের সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। শিল্পকে জমি দিলেও পুকুর ভরাট করা যাবে না। শিল্প সংস্থাকে ওই ওয়াটার বডির চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখার শর্ত দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, হলদিয়ায় বিভিন্ন শিল্প সংস্থা ২৪০ একর জমি চেয়েছে শিল্প গড়তে। শিল্প প্রস্তাবগুলি এখন রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। জমির সমস্যা মিটলেই ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হতে চলছে যা এই মুহূর্তে হলদিয়ার ইতিহাসের সর্ব বৃহৎ বিনিয়োগ। এদিন এইচডিএর কাজের প্রশংসা করেছেন পুরমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, হলদিয়াকে রাজ্যের সবচেয়ে আধুনিক পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলেছে এইচডিএ। এইচডিএর আর্থিক ক্ষমতা সংকোচন নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে গত কয়েকমাস ধরে। সেখানে মন্ত্রীর এধরনের প্রশংসা ফের আশার সঞ্চার করেছে এইচডিএর কর্মী মহলে। এদিন এইচডিএর শিল্প বিষয়ক সভায় জেলাশাসক পূর্ণেন্দুকুমার মাজি, পুলিস সুপার সৌম্যজিত ভট্টাচার্য, এইচডিএর সিইও কোন্থাম সুধীর, মহকুমা শাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়, বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান সম্রাট রাহি, আইওসির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর সহ শতাধিক শিল্প প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
  • Link to this news (বর্তমান)