বোমাবাজি: কর্মাধ্যক্ষ, উপপ্রধান সহ ৩৮ জনের নামে এফআইআর
বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: গত রবিবার বোমাবাজির ঘটনায় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল পুরুলিয়ার মফস্সল থানার টাটাড়ি গ্রাম। গ্রামের দুই পরিবার গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে বোমাবাজিই শুধু নয়, গ্রামের একাধিক বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। সেই ঘটনায় দু’টি পৃথক অভিযোগের ভিত্তিতে পুরুলিয়া-১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, ঘোঙ্গা পঞ্চায়েতের উপ প্রধান শেখ মোতাহির সহ মোট ৩৮ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হল পুরুলিয়া মফস্সল থানায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। তবে চারদিন কেটে গেলেও এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিস।
টাটাড়ি গ্রামের দুই পরিবার গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের। পুরুলিয়া-২ ব্লকের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ শেখ কালাম ও ঘোঙ্গা পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান শেখ মোতাহিরের পরিবার ওই গ্রামের ‘ক্ষমতাসীন’ পরিবার গোষ্ঠী হিসাবেই পরিচিত। সেই পরিবারের এক সদস্যের বিয়ে ছিল শনিবার। সেই উপলক্ষ্যে ওইদিন রাতে বক্স বাজছিল। সবকিছু ঠিকই ছিল। কিন্তু অভিযোগ, অন্য পরিবার গোষ্ঠীর কিছু সদস্য ইচ্ছাকৃত ভাবে ট্রান্সফর্মারের মেন সুইচ অফ করে দেন। পরের দিন সকালে কর্মাধ্যক্ষদের পরিবারের এক সদস্য বাইক নিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় বাইকের সামনে চলে আসে তিন বছরের এক শিশু। বাইকের ধাক্কায় শিশুটি জখম হয় বলে অভিযোগ। এই নিয়েই দুই পরিবার গোষ্ঠীর মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হয় গ্রামে। একে অপরের মধ্যে মারপিটে জড়িয়ে পড়ে। বহু বাড়ি, দোকানঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ। গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজিও হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিস। মাটি হয়ে যায় বিয়েবাড়ির আনন্দ। পুলিস সূত্রের খবর, সেই ঘটনায় কর্মাধ্যক্ষ পরিবারের সদস্য শেখ কায়েম মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন। অন্যদিকে, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শেখ কালাম, উপপ্রধান শেখ মোতাহির সহ মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন অপর পরিবার গোষ্ঠীর সদস্য শেখ সেনাউল্লা। এনিয়ে কর্মাধ্যক্ষ বলেন, আমাদের বাড়িতে বিয়ে ছিল। আমাদের অশান্তি করার কোনও মতলবই ছিল না। সম্পূর্ণ চক্রান্ত করেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমাদের টাকা পয়সা গয়না লুট করেছে। উপ প্রধান বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসকে কালিমালিপ্ত করতেই এই চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা কেউ ঘটনাস্থলে ছিলামই না। অন্য পরিবারের শেখ সেনাউল্লা বলেন, কর্মাধ্যক্ষ ও উপপ্রধানের মদতেই এইসব হয়েছে। পুলিস সঠিক তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। তবে প্রশ্ন উঠছে, গ্রামে এত বোমা এল কোথা থেকে? গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশই জানাচ্ছেন, এই গ্রামে বোমাবাজির ঘটনা নতুন নয়। প্রায়শই ঘটে থাকে। সামান্য কথা কাটাকাটি হলেও বোমা, বন্দুকেই জবাব দিয়ে থাকেন বাসিন্দাদের অনেকেই। নির্বাচন এলে বোমাবাজির ঘটনা আরও বাড়ে। লোকসভা, বিধানসভা, থেকে শুরু করে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ওই গ্রামে বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ড থেকে সহজেই গ্রামে এসে পৌঁছয় বোমা। আবার গ্রামের অনেকেই রয়েছেন যাঁরা বোমা বাঁধায় পটু। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি গৌতম রায় বলেন, দুষ্কৃতীদের আশ্রয়স্থল হল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল এদেরকে ভোটের কাজে ব্যবহার করে। সেই কারণেই এত বড় ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিস। লজ্জা হওয়া উচিত। -নিজস্ব চিত্র