শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: কলকাতা তথা গোটা রাজ্যে ভুয়ো কোম্পানি খুলে কমিশনের বিনিময়ে কালো টাকাকে সাদা করা হচ্ছিল। চার জেলার বিভিন্ন ঠিকানায় খোলা হয়েছিল একাধিক অফিস। ব্যবসায়ী থেকে সাইবার জালিয়াত, প্রত্যেকের বস্তা বস্তা নগদ ঢুকত এই সমস্ত অফিসে। এক-দু’কোটি নয়, এভাবে সাড়ে তিনশো কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে বলে অভিযোগ। আর তার পুরোটাই হয়েছে গত দু’বছরে। কাগুজে কোম্পানি খুলে কালো টাকাকে সাদা করার ওই চক্রের কিং পিন সুপ্রভাত নস্করকে ক্যানিংয়ের জীবনতলা থেকে গ্রেপ্তার করল ডিরেক্টরেট অব ইকনমিক অফেন্সেস (ডিইও)। জাল নথি দিয়ে কোম্পানির নামে যে সমস্ত অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল, সেগুলি ‘ফ্রিজ’ করা হয়েছে।
ডিইও সূত্রে খবর, সুপ্রভাত নস্কর কিছুদিন আগে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পান। তাঁকে বলা হয়, আর্থিক লেনেদেনের সংস্থা খুলতে পারলে ভালো রোজগার করা যাবে। কীভাবে তা সম্ভব, জানতে চাইলে বলা হয় বিভিন্ন জায়গা থেকে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়বে। ওই টাকা ঘুরিয়ে দিতে হবে। নগদ হাওলার মাধ্যমে পৌঁছে যাবে। এক থেকে দুই পার্সেন্ট কমিশন মিলবে। তাতে রাজি হলে দুটি কোম্পানি খুলে টাকা ঘুরিয়ে ভালো রোজগার করেন অভিযুক্ত। কোন নম্বর থেকে এসেছিল সেই হোয়াটস অ্যাপ? তদন্তকারীদের সুপ্রভাত জানান, দুবাইয়ের একটি নম্বর থেকে ওই মেসেজ এসেছিল। তবে তদন্তে নেমে জানা যায়, প্রযুক্তি কৌশলে দুবাই থেকে এসেছে বলে দেখানো হলেও, আসলে মেসেজ এসেছিল মুম্বই থেকে।
ডিইও’র তদন্তে উঠে এসেছে, অভিযুক্ত সুপ্রভাত জীবনতলা এলাকায় কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট চালাতেন (সিএসপি)। বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে টাকা তোলার জন্য আধার, প্যানসহ বিভিন্ন নথি জমা পড়ত। ওই নথি দিয়ে কোম্পানি খুলতেন কিংপিন। তদন্তকারীরা জেনেছেন, দুই ২৪ পরগনা, নদীয়া, হাওড়া, হুগলিসহ বিভিন্ন জেলার ঠিকানা দেখিয়ে সংস্থাগুলি খোলা হয়। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে খোলা হয়েছিল বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। তদন্তকারীরা জেনেছেন, নথি হাতিয়ে চালু করা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সাহায্যে ভুয়ো কোম্পানি মারফৎ এখনও পর্যন্ত ৩৫০ কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে।
তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন, হাওড়ায় ঠিকানায় খোলা সংস্থা থেকেই সবচেয়ে বেশি কালো টাকা সাদা হয়েছে। তার ভিত্তিতে হাওড়া থানায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে সুপ্রভাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এখনও পর্যন্ত ৫০ টি কোম্পানির সন্ধান মিলেছে। তবে কালো টাকা সাদা করার পরিমাণ পাঁচশো কোটি ছাড়াবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।