• যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা দাবি, রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ চাকরিহারাদের
    বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: যোগ্য হয়েও কেন তাঁরা চাকরিহারা? কারা যোগ্য, আর কারাই বা অযোগ্য? এই প্রশ্ন তুলে বুধবার রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্ট ইনসপেক্টর অব স্কুলস বা ডিআই অফিসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা। সকাল থেকে আন্দোলন চলে আসানসোল, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, কৃষ্ণনগর, তমলুক, সিউড়ি, বারাসত, চুঁচুড়ায়। কসবায় কলকাতা জেলার ডিআই অফিসে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পুলিসের বিরুদ্ধে নির্বিচারে লাঠিচার্জের অভিযোগ তুলেছে বিক্ষোভকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কলকাতার পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেছেন, ‘পুরো ফুটেজ আমরা দেখছি। একটা অংশ দেখানো হচ্ছে। যে ছবি দেখানো হচ্ছে, তা কাম্য নয়। পুলিস এমন অ্যাকশন কেন নিল, তাও দেখতে হবে। রিপোর্ট চেয়েছি।’

    ঘটনার সূত্রপাত এদিন দুপুরে। ‘ডিপ্রাইভড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর দাবি, কসবার ডিআই অফিসে তাঁরা ডেপুটেশন জমা দিতে গিয়েছিলেন। পুলিসের গার্ডরেল সরিয়ে, গেটের তালা ভেঙে ডিআই অফিসের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। চাকরিহারাদের দাবি, এরপরেই তাঁদের উপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে পুলিস। এমনকী এক পুলিস কর্মীর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের লাথি মারার অভিযোগও তোলা হয়েছে। কলকাতা পুলিসের অবশ্য পাল্টা দাবি, কসবা ডিআই অফিসের বাইরে এদিন প্রথমেই বিনা উস্কানিতে হামলা চালিয়েছিল একদল বিক্ষুব্ধ জনতা। লালবাজার সূত্রে খবর, সেই ঘটনায় জখম হয়েছেন কসবা থানার সার্জেন্ট তন্ময় মণ্ডল, দু’জন মহিলা সহ মোট পাঁচজন কনস্টেবল। তাঁরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে, ক্ষয়ক্ষতির রোধ করতে পুলিস বাধ্য হয়ে হাল্কা বলপ্রয়োগ করে। তদন্ত চলছে।’ এসএসডি ডিসি জানিয়েছেন, অফিস ভাঙচুরের ব্যাপারে ডিআইয়ের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। স্বতঃপ্রণোদিত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় পাঁচজন আন্দোলনকারীকে আটকও করে পুলিস। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এপ্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রশ্ন, ‘চাকরিহারারা ডিআই অফিসে কেন গিয়েছেন? মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বিষয়টি দেখছেন। আগ্রাসী আন্দোলন চালিয়ে গেলেও সরকার তাঁদের আইনি প্রতিরক্ষা দেবে।’ 

    এদিন বিক্ষোক্ষে অংশ নিয়েছিলেন চাকরিহারা অঙ্কের শিক্ষক শুভদীপ দাস। সংবাদমাধ্যমের সামনে পুলিসের ভাঙা লাঠি তুলে দেখিয়ে  তিনি বলেন, ‘আমাদের উপর বেধড়ক অত্যাচার করেছে পুলিস। মারতে মারতে লাঠি ভেঙে গিয়েছে।’ পরে ডেপুটেশন জমা দিয়ে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও অনেকে আহত। পরে কসবা থানার পুলিস কর্মীদের চকলেট উপহার দিতে যান চাকরিহারা শিক্ষকরা। পুলিস তা গ্রহণ করেনি। এরপর গড়িয়াহাট পর্যন্ত মিছিলও করেন বিক্ষোভকারীরা। সেখানে ১৫ মিনিট পথ অবরোধও করা হয়। আজ, বৃহস্পতিবার কলেজ স্ট্রিট থেকে একটি মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে তাঁদের তরফে। এদিনের ঘটনার লালবাজারের প্রবেশপথ আটকে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছিলেন বিজেপির আটজন বিধায়ক। ওই চত্বরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে গেরুয়া শিবিরের বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়।

    এদিন ডিআই অফিসের সামনে অভয়া মঞ্চের সদস্যদেরও দেখা গিয়েছে। পুলিসের অনুমান, লোহার গেট ও তালা যেভাবে ভাঙা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে সেখানে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৩০০ জন ছিলেন। ডিসি এসএসডির নির্দেশেই লাঠি চলেছে। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এদিন বলেন, ‘কয়েকটি জায়গায়, কারও প্ররোচনায় কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা এগুলো চাই না। গোটা বিষয়টা মানবিকভাবে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছি। রিভিউ পিটিশন শীঘ্রই ফাইল করব। ওঁদের কষ্ট আমরা বুঝতে পারছি। অনুরোধ করব, এমন কিছু করবেন না যাতে বিষয়টি ফের আইনগত হয়ে যায়। আমরা কাউকে টার্মিনেশন লেটার দিইনি। কিন্তু উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্য একটা অ্যাকশন নিতেই হতো।’
  • Link to this news (বর্তমান)