এই সময়: সুপ্রিম–রায়ে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে যোগ্যদের চাকরি নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি, অধুনা বিজেপির সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রস্তাবে রাজি হয়ে বুধবার তিনি বিকাশ ভবনে গিয়ে যোগ্যদের চাকরি রাখার উপায় বাতলে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠি দেবেন বলেও কথা দিয়েছিলেন।
কিন্তু বুধবার সল্টলেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) অফিসে গেলেও ব্রাত্যর কাছে গেলেন না অভিজিৎ। শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, অভিজিতের না আসার পিছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। অভিজিতকে কটাক্ষ করে পুরোনো পল্লিগান টেনে ব্রাত্যর মন্তব্য, ‘আমার একটা কবিতা মনে পড়ছে— ‘তুমি সর্প হয়ে দংশন করো, ওঝা হয়ে ঝাড়ো! ওঁর বিষয়টা খানিকটা সে রকমই।’
যদিও অভিজিৎ এসএসসি অফিস থেকে দুপুরে বেরিয়ে বলেন, ‘কসবায় বিক্ষোভরত যোগ্য শিক্ষকদের উপরে পুলিশি লাঠিচার্জের প্রতিবাদেই বিকাশ ভবনে যাব না। সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক বানচাল হয়ে গেল।’ তিনি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিও। যদিও তার আগে এসএসসি–র চেয়ারপার্সন সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে আধ ঘণ্টা কথা বলেন অভিজিৎ। প্রাক্তন বিচারপতি বলেন, ‘আজকের কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে আমাদের ধারণা হয়েছে, এসএসসি চাইলে ওএমআর–এর মিরর ইমেজ থেকে যোগ্য–অযোগ্যদের তালিকা আলাদা করতে পারে।’ যদিও এসএসসি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছিল, তাদের কাছে কোনও মিরর ইমেজই নেই। যা আছে, সেটা সিবিআইয়ের থেকে পাওয়া। অভিজিৎ যে ব্রাত্যর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন না, তা বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে আগেই জানানো হয়েছিল। এর পরেই ব্রাত্য বলেন, ‘উনি নিজেই আমার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠি জমা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে জানিয়েছেন, আসবেন না।’
ব্রাত্যর বক্তব্য, ‘কসবার ঘটনার প্রতিবাদে তিনি এলেন না, এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। শিক্ষা দপ্তর পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নয়। তা ছাড়া, এখানে এলেন না, কিন্তু এসএসসি অফিসে গেলেন? স্বশাসিত হলেও ওটাও তো সরকারি অফিসই!’ শিক্ষামন্ত্রীর মত, অভিজিতের না আসার নেপথ্যে ভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তাঁর কটাক্ষ, ‘উনি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিতে চাওয়ায় দলীয় রাজনীতিতে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলো কি না, দল ওঁকে বারণ করল কি না—সে সব উনিই বলতে পারবেন!’ যদিও এ ব্যাপারে জানতে অভিজিতকে ফোন ও হোয়াটাসঅ্যাপে মেসেজ করেও উত্তর মেলেনি।
ব্রাত্য জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই চাকরিহারাদের সঙ্গে তাঁরা ফের বৈঠকে বসতে চলেছেন। এসএসসি–র চেয়ারপার্সন, শিক্ষাসচিব থেকে শুরু করে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা বৈঠকে থাকবেন। কিন্তু তার আগেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)-এর দপ্তর অভিযান ঘিরে বুধবার সকাল থেকে প্রবল গোলমাল তৈরি হয়। সকালে কলকাতার কসবায় ডিআই অফিসে বিক্ষোভরত চাকরিহারা শিক্ষকদের উপরে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
ব্রাত্য বলেন, ‘নেতাজি ইন্ডোরে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেওয়ার পরে চাকরিহারাদের নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছিল। তাঁদের চাকরি কী ভাবে ফেরানো যায়, সে ব্যাপারে একটি সুরাহার পথ খুঁজে বার করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এই সপ্তাহেই আবার বৈঠকে বসার কথা। সরকার সব রকম ভাবে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও এখনই আন্দোলন, লড়াই, প্রতিবাদ কেন? আমরা তো যোগ্য বঞ্চিতদের পাশে আছি। একটু ধৈর্য ধরুন।’
চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা যা-ই করুন, তাঁদের রক্ষা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো যোগ্যদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘ওঁদের ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের পরেও আমি বৈঠকে বসব। পালাব না। সরকার, স্কুলশিক্ষা দপ্তর এবং এসএসসি যোগ্য চাকরিহারাদের সঙ্গে কথা বলছে, সেই সময়ে এই প্রতিবাদ আন্দোলন অন্তত কিছু দিনের জন্য স্থগিত রাখা উচিত।’