• কসবায় ‘বাধ্য হয়েই হালকা বলপ্রয়োগ’, কবুল করল কলকাতা পুলিশ! মুখ্যসচিব বললেন, যা ঘটেছে, বাঞ্ছনীয় নয়
    আনন্দবাজার | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • বাধ্য হয়েই ‘হালকা বলপ্রয়োগ’ করা হয়েছে। কসবায় তালা ভেঙে স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)-এর অফিসে ঢুকে পড়া চাকরিহারাদের উপর লাঠিচার্জের ঘটনায় বলল কলকাতা পুলিশ। পুলিশ কমিশনার (সিপি) মনোজ বর্মা বলেন, “পুলিশ কারও বিরুদ্ধে নয়। পরিস্থিতি বাধ্য না-করলে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে না।” কসবার ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের লাথি মারার অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সিপির বক্তব্য, “এটা কাম্য নয়। তবে পুলিশেরও অনেকে আহত হয়েছেন।” সিপিকে পাশে বসিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবও বলেন, “সরকারি সম্পত্তি যদি ভাঙচুর হয়, পুলিশকে মারধর করা হয়, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পুলিশকে তো পদক্ষেপ করতেই হবে।”

    নবান্নে মুখ্যসচিব এবং পুলিশ কমিশনারের সাংবাদের বৈঠকের আগে লালবাজারের তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, “আজ কসবা ডিআই অফিসের বাইরে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে স্পষ্ট ভাবে জানানো হচ্ছে যে, প্রথমে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা বিনা উস্কানিতে পুলিশকর্মীদের উপর হামলা চালায় এবং হিংসাত্মক আচরণ করে, যার মধ্যে মহিলা পুলিশকর্মীরাও ছিলেন। চার জন পুরুষ পুলিশকর্মী এবং দু’জন মহিলা পুলিশকর্মী আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।” বিবৃতিতে আরও লেখা হয়েছে, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং আরও ক্ষয়ক্ষতি ও আহতের ঘটনা রোধ করতে পুলিশ বাধ্য হয়ে হালকা বলপ্রয়োগ করে। এই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে।”

    সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিপি বলেন, “পুলিশের কাছে আগে থেকে খবর ছিল না। বিনা উস্কানিতেই পুলিশের উপর হামলা হয়েছে। আমাদের ছ’জন আহত। এক জন গুরুতর আহত।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে আহতদের এক জন সার্জেন্ট। বাকি পাঁচ জন কনস্টেবল। লাথি মারার অভিযোগ প্রসঙ্গে সিপি বলেন, “যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে ভিডিয়োটা দেখানো হচ্ছে, তার আগেও কিছু রয়েছে। সেটাও দেখা উচিত। আমরা দেখছি।” ইতিমধ্যেই কসবার ঘটনায় দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। একটি অভিযোগ করেছেন ডিআই। আর পুলিশ একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।

    ২০১৬ সালের এসএসসিতে নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে চাকরি গিয়েছে ২৫৭৩৫ জনের। যদিও সরকারের থেকে এখনও বরখাস্তের চিঠি পাননি তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘যোগ্য’দের পাশে তিনি থাকবেন। কিন্তু তার পরও চাকরিহারাদের বিক্ষোভে উত্তাল গোটা রাজ্য। বুধবার সকালে চাকরিহারাদের একাংশ জড়ো হন কসবায় ডিআই অফিসের সামনে। তবে তাঁরা যাতে ভিতরে প্রবেশ করতে না-পারেন, সে জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রেখেছিল পুলিশ। ব্যারিকেডের পাশাপাশি ডিআই অফিসের গেটে তালা লাগানো ছিল। কিন্তু বেলা গড়াতে ওই তালা ভেঙে দফতরের ভিতরে ঢুকে পড়ে চাকরিহারারা।

    চাকরিহারাদের দাবি ছিল, স্কুল পরিদর্শককে দেখা করতে হবে। তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন চাকরিহারারা। কিন্তু অফিসে ছিলেন না স্কুল পরিদর্শক। পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করে। তবে তালা ভেঙে ডিআই অফিসে ঢুকলেই তাঁদের আটকায় পুলিশ। ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করার অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের লাঠির ঘায়ে কয়েক জন আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ। চাকরিহারা এক শিক্ষক প্রতাপ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘আমরা যোগ্য, তাই চাকরিহারা হয়ে আজ রাজপথে আন্দোলন করছি। পুলিশ আমাদের নির্বিচারে লাঠি মেরেছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)