• ‘প্রায়শ্চিত্ত-মিছিলে’ তৃণমূলের তরুণবাহিনী! অক্সফোর্ড-কাণ্ডে নীরব থাকা ছাত্রযুবদের সক্রিয় করা গেল চাকরি বাতিলের পর
    আনন্দবাজার | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • তরুণদের পথে নামাতে ঠেলা মারতে হচ্ছে বুড়োদের! শাসকদল তৃণমূলের ছাত্রযুব বাহিনীর ‘গতি’প্রকৃতি নিয়ে কপাল কুঁচকোচ্ছেন দলের অনেকেই। সমালোচনা তীব্র হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর ইংল্যান্ড সফরের সময়। বুধবার চাকরি বাতিল নিয়ে মিছিলে কিছুটা ‘প্রায়শ্চিত্ত’ হলেও, প্রশ্নের হাত থেকে মুক্তি মিলল না পুরোপুরি।

    গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজে বক্তৃতা চলাকালীন বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সরাসরি মমতার মুখের উপর বলে দেওয়া হয়েছিল, ‘‘আপনি মিথ্যাবাদী।’’ যার দায় স্বীকার করেছিল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের ব্রিটেন শাখা। কিন্তু তার পরেও তৃণমূলের তরুণ বাহিনীর তরফে রাস্তায় কোনও প্রতিবাদ দেখা যায়নি। তার ১৩ দিনের মাথায় বুধবার ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের ঘটনায় ‘বিজেপি-সিপিএমের যৌথ ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে রাস্তায় নামল তৃণমূলের ছাত্র-যুব সংগঠন। কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল হল। মিছিল শেষে সভামঞ্চ থেকে বাম-বিজেপিকে এক বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ শানালেন তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, সায়নী ঘোষেরা। তবে শাসকদলের অভ্যন্তরেই প্রশ্ন উঠছে, এই রকম পরিস্থিতিতে কেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে নির্দেশিকা জারি করে রাস্তায় নামার কথা বলতে হল? কেন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আগেই ছাত্র-যুবরা রাস্তায় নামলেন না?

    অক্সফোর্ড-কাণ্ডের পরে রাস্তায় নামা তো দূরের কথা, কেন দলের একাংশ সমাজমাধ্যমেও প্রতিবাদ করছেন না, সেই প্রশ্ন প্রকাশ্যেই তুলেছিলেন তৃণমূলের কয়েক জন নেতা। সেই সূত্রেই ফিরে আসছিল ১২ বছর আগের একটি ঘটনার কথা। ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল কলকাতার একটি মিছিলের পরে সিপিএমের ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তের ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর’ ঘটনা ঘটেছিল। তার কয়েক দিন পরে দিল্লিতে যোজনা কমিশনের বাইরে মমতা এবং তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে বাম-বিক্ষোভের মুখে প়়ড়তে হয়েছিল। সেই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সারা রাজ্যে পথে নেমে প্রতিবাদ করেছিল তৃণমূল। কোথাও কোথাও মধ্যরাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল সিপিএমের পার্টি অফিস। ২০১৩ সালের এপ্রিলে মমতা-সরকারের বয়স দু’বছরও হয়নি। ২০২৫ সালের এপ্রিলে মমতার সরকার প্রায় ১৪ বছর হতে চলল। শাসকদলের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি প্রায় দেড় দশক ক্ষমতায় থাকার পরে ছাত্র-যুব সংগঠনের ‘তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া’ দেখানোর মেজাজে মরচে পড়েছে?

    প্রসঙ্গত, বুধবারের মিছিলের পরে দলের প্রথম সারির নেতারাও ছাত্র-যুবদের ‘মেজাজ’ নিয়ে একান্ত আলোচনায় উষ্মা গোপন করছেন না। এক নেতার কথায়, ‘‘বুধবার মিছিল হয়েছে বটে, তবে তাতে পরিকল্পনা অভাব ছিল। না হলে বেলা ৩টের মিছিল বিকেল ৪টেয় শুরু করতে হয় না।’’ তৃণমূল সূত্রে খবর, জমাট এতটাই ভাবের অভাব ছিল যে, মিছিল শুরুর সময়েও সামনে ব্যানার ছিল না। বেশ কিছু ক্ষণ পরে তা আনা হয়। তবে মিছিলে তরুণদেরই ভিড় ছিল। শুধু কলকাতা নয়, হাওড়ারও বড় জমায়েত এসেছিল বুধবারের মিছিলে। সামনের সারিতে সায়নী-তৃণাণঙ্কুরের পাশে হাঁটতে দেখা গেল হাওড়া সদরের যুব তৃণমূল সভাপতি কৈলাস মিশ্রকেও।

    এক দিনের নোটিসে এই জমায়েতকে অবশ্য মঞ্চ থেকে বাহবাই জানিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর। সভায় তিনি বলেন, ‘‘প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মিলে হাজার হাজার চাকরিরত শিক্ষককে পথে বসিয়েছেন।’’ যুব তৃণমূলের সভানেত্রী তথা যাদবপুরের সাংসদ সায়নীর কথায়, ‘‘আরজি করের সময়ে সারা রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সন্দেশখালির সময়ে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। এখন শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে। আসলে বিজেপি-সিপিএমের নিশানা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

    আরজি কর পর্বেও বারংবার শাসকদলের অন্দরে ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না-হওয়ার ফলে দলের ছাত্র নেতৃত্ব সেই অর্থে পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে উঠে আসছেন না বলেও মনে করে তৃণমূল নেতৃত্বের একটি অংশ। অক্সফোর্ড-কাণ্ডের পরে দলের অনেকে প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন। বুধবার সেই ছাত্র-যুবরা রাস্তায় নামলেন বটে। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পথে নামার মতো অবস্থায় তারা আছে কি? এখনও নিশ্চিত নন তৃণমূলের অনেকেই।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)