জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জন্য তহবিলের যাবতীয় হিসাব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের মঞ্চ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’ (ডাব্লিউবিজেডিএফ)। আগামী ১৬ এপ্রিল একটি গণ সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। আরজি কর হাসপাতালেই হবে ওই সম্মেলনটি। ডাব্লুবিজেডিএফ জানিয়েছে, সেখান থেকেই তহবিলের ‘পাই-পয়সার হিসাব’ বুঝিয়ে দেবে তারা।
গত বছরের ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছিল কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে। তার প্রতিবাদে কলকাতা তথা রাজ্য জুড়ে আন্দোলন হয়েছিল। অনেক সাধারণ মানুষ এবং বেশ কিছু নাগরিক মঞ্চও শামিল হয়েছিল আন্দোলনে। আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে সেই সময় অনেকেই আর্থিক অনুদান করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে অনুদানের তহবিল নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নও উঠতে শুরু করে। তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। ওই বিতর্কের আবহে বিধাননগর পুলিশ বেশ কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারকে তলবও করেছিল।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন এখন দৃশ্যত স্তিমিত। দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। তবে আন্দোলনের সময়ে তৈরি হওয়া তহবিল নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। আরজি কর-কাণ্ডের আট মাসের মাথায় বুধবার আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা আরজি কর হাসপাতাল থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন। ছিলেন অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদার, আসফাকুল্লাহ্ নাইয়া-সহ ডাব্লিউবিজেডিএফ-এর আন্দোলনকারী অন্য জুনিয়র ডাক্তারেরাও। সেখানে অনিকেত বলেন, “প্রতিটি পাই পয়সার হিসাব ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট দেবে। ১৬ এপ্রিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে কনভেনশনের ডাক দিচ্ছি। এই কনভেনশনের মাধ্যমে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’ সাধারণ মানুষের কাছে পাই পয়সার হিসাব তুলে ধরবে। সাধারণ মানুষ আমাদের যে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন, সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা এই পাই পয়সার হিসাব মিটিয়ে দেব।”
একই সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের উদ্দেশেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন অনিকেত। তিনি জানিয়েছেন, আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা নিজেদের তহবিলের হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার পর প্রশাসনের থেকেও হিসাব চাইবে। সেই হিসাব তৈরি রাখার জন্যও প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, ‘শিক্ষা দুর্নীতি’, ‘কয়লা দুর্নীতি’, ‘গরুপাচার’-এর হিসাব রাজ্য প্রশাসনের থেকে বুঝে নেওয়ার দাবিতে তাঁরা আন্দোলন শুরু করবেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্দোলনের দিশা কী হবে, সে বিষয়েও ওই সম্মেলন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
আরজি কর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের বেশ কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তারকে তলব করেছিল বিধাননগর থানা। তাদের পাঠানো সেই নোটিসে জানানো হয়েছিল, রাজু ঘোষ নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সাত জনকে তলব করা হচ্ছে। বুধবার জুনিয়র ডাক্তারদের সাংবাদিক বৈঠকের সময়ে ওই জনৈক রাজু ঘোষের নামও উঠে আসে। তাঁদের দাবি, ওই ব্যক্তি পরে যুক্তিযুক্ত কোনও কারণ দেখাতে পারেননি। অনিকেতদের বক্তব্য, “অগণিত গণ আন্দোলনে সাধারণ মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন। এর আগেও হাজার আন্দোলন হয়েছে। সেই আন্দোলনেও সাধারণ মানুষ টাকা দিয়েছে। কোন সরকার, কোন সময়ে গণ আন্দোলনের তহবিলের হিসাব চেয়েছে! নেতাজি, গান্ধীজি, চিত্তরঞ্জন দাসের কাছে হিসাব চেয়েছে?” বর্তমানে ২৬ হাজার শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের প্রসঙ্গও উঠে আসে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের কথায়। অনিকেত জানান, তাঁরা নিজেদের কাজের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে যে কোনও গণ আন্দোলনের পাশে থাকতে চান।