সবুজ সাথীর সাইকেল নিতে ১০০ টাকা করে দিচ্ছে পড়ুয়ারা! কুলতলির স্কুলে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ
আনন্দবাজার | ১০ এপ্রিল ২০২৫
রাজ্যের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিনামূল্যে সাইকেল দেয় রাজ্য সরকার। সেই সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেলের বিনিময়ে পড়ুয়াদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি ব্লকের একটি উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শাসকদল তথা স্কুল কর্তৃপক্ষকে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগে বিদ্ধ করছেন বিরোধীরা। সব শুনে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়কের আশ্বাস, টাকা ফেরত দেওয়া হবে পড়ুয়াদের।
কুলতলি ব্লকে পাচুয়াখালি হাই স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। স্কুলের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীর দাবি, সবুজ সাথীর সাইকেল নেওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নিয়েছে স্কুল। কিন্তু কেন? স্কুলছাত্রী অর্চনা সর্দারের দাবি, এই টাকা প্রতি বছরই দিতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেক বছর যারা যারা সাইকেল পায়, তাদের টাকা দিতে হয়।’’ দিলরুবা মণ্ডল নামে আর এক ছাত্রী বলে, ‘‘স্যর কেন টাকা চেয়েছেন, তা জিজ্ঞাসা করিনি। কারণ জিজ্ঞাসা করলে স্যর বকাবকি করতে পারেন। তা ছাড়া তখন সাইকেলও পাব না।’’ একই শঙ্কা অন্য পড়ুয়াদেরও। নবম শ্রেণির ছাত্রী শাবানা শেখ বলে, ‘‘প্রতি বছর সাইকেল নেওয়ার সময় সবাই চাকা দেয়, তাই আমরাও দিয়েছি। তবে এ জন্য কোনও রসিদ দেওয়া হয়নি।’’
স্কুল সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে ২ হাজার ৪০৫ জন ছাত্রছাত্রীকে সবুজ সাথীর সাইকেল দেওয়া হয়েছে। তাদের সকলের কাছ থেকে কি ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে? স্কুলের প্রধানশিক্ষক মোহম্মদ জাহাঙ্গির আলমের ব্যাখ্যা ‘অন্য রকম’। তাঁর দাবি, অভিযোগ সঠিক নয়। তা হলে? প্রধানশিক্ষক বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বিনামূল্যে সাইকেল দিলেও আমাদের স্কুলের সাইকেল জমা পড়ে জামতলায়। সেখান থেকে নিজেদের খরচে সাইকেল নিয়ে আসতে হয় স্কুলে। কিন্তু ওই টাকা স্কুল থেকে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে।’’ যদিও পরোক্ষে প্রধানশিক্ষক স্বীকার করে নিচ্ছেন, এই ভাবে পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু তাঁরা বাধ্য হয়ে ১০০ টাকা করে নিয়েছেন। জাহাঙ্গিরের আরও দাবি, ‘‘অনেকে পড়ুয়া টাকা দেয়নি। তাদের টাকা নিজের পকেট থেকে দিয়েছি।’’
বিষয়টি জানাজানি হতেই কুলতলিতে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক উদয় মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল জমানায় রাজ্য জুড়েই তোলাবাজি চলছে। প্রতিটি প্রকল্প থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। দুঃখের বিষয়, এতে স্কুলপড়ুয়ারাও বাদ যাচ্ছে না!’’ তবে সব শুনে কুলতলির বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল জানান, যা হয়েছে, ভুল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটাও নজরে রাখব আমরা।’’