• জটিল প্রশ্নের কঠিন পরীক্ষার মুখে প্রধান শিক্ষকেরা
    আনন্দবাজার | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • নিকট অতীতে স্কুল চালাতে গিয়ে এক সঙ্গে এত ধরনের গুরুতর সমস্যার সামনে তাঁরা শেষ কবে পড়েছেন, মনে করতে পারছেন না অধিকাংশ সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা।

    শীর্ষ আদালতের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের ফলে স্কুলে-স্কুলে শিক্ষক সঙ্কট তো আছেই, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একের পর এক জটিল অঙ্ক। চাকরিহারা শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের বেতনের কী হবে, ‘স্যালারি রিকুইজিশান’ পাঠানো হবে কি না, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কোনও চাকরিহারা শিক্ষক স্কুলে পরিষেবা দিতে চাইলে তাঁকে অনুমতি দেওয়া বা হাজিরা খাতায় সই করতে দেওয়া হবে কি না, স্কুলের পড়ুয়াদের প্রথম পর্বের পরীক্ষা ও পঠনপাঠন কী ভাবে স্বাভাবিক রাখা যাবে, পার্শ্বশিক্ষকদের কর্মবিরতি কী ভাবে সামলানো হবে—এ রকম অসংখ্য প্রশ্ন তাঁদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কার্যত পরীক্ষা নিতে অভ্যস্ত প্রধান শিক্ষকেরাই এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছেন।

    জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দফতর সূত্রের খবর, চাকরিহারা শিক্ষকদের এপ্রিলের বেতন সম্পর্কে মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি ভাবে নির্দেশ জেলার স্কুলে আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের চাকরি ফেরানোর আশ্বাস দেওয়ার পরে তাঁদের একাংশ মঙ্গলবার স্কুলে যাচ্ছেন। তবে তাঁদের উপস্থিতি খাতায় সই করানো হবে কি না, তা নিয়ে ধন্দে প্রধান শিক্ষকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সরকারি নির্দিষ্ট পোর্টালে ‘স্যালারি রিকুইজিশন’ সংক্রান্ত তথ্য আপলোড করতে হয় মাসের ১০ তারিখের মধ্যে। বিশেষ ক্ষেত্রে ১৫-২০ তারিখ হয়ে থাকে। পূর্ব মেদিনীপুরের চাকরিহারাদের অধিকাংশই ৩ এপ্রিল পর্যন্ত স্কুলে এসেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা এপ্রিলের বেতন পাবেন কি না, প্রধান শিক্ষকেরা বুঝতে পারছেন না।

    তমলুকের কাকগেছিয়া সত্যনারায়ণ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই স্কুলে চার জন শিক্ষক, দু’জন শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। রায়ের পরের দিন এক জন শিক্ষক এসেছিলেন। পরে কেউই আসেননি। এঁদের এপ্রিলে বেতন দিতে স্যালারি রিকুইজিশন পাঠানো হবে কি না, জানি না।’’ প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস’-এর জেলা সম্পাদক মৃণ্ময় মাজি বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে নির্দেশ না আসায় জেলার কিছু হাই স্কুলে চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের স্কুলের খাতায় সই করা নিয়ে মতবিরোধ ঘটেছে। বিশেষ করে এপ্রিলের স্যালারি রিকুইজিশন নিয়ে বেশি সংশয় দেখা দিয়েছে। দ্রুত সরকারি নির্দেশিকার জন্য আমাদের সংগঠন ইতিমধ্যে রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতির কাছে চিঠি দিয়েছে।’’

    এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পলাশ রায় বলেন, ‘‘ওই সব শিক্ষকদের স্কুলে আসতে হবে কি না, এ বিষয়ে কোনও নির্দেশ জেলায় আসেনি। তাই আমরাও স্কুলগুলিকে নির্দেশ দিইনি। বেতন সংক্রান্ত বিষয়ে এখনও দফতর থেকে কিছু জানা যায়নি। তবে স্যালারি রিকুইজিশন মাসের ১৫-২০ তারিখ পর্যন্ত জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)