এই সময়, কলকাতা ও খড়গপুর: রাজ্যের উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের স্যালারি পোর্টাল (i-osms) বুধবারই খুলে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের রায়ে গত ৩ এপ্রিল প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের পরে এই পোর্টাল না–খোলায় তাঁরা যথেষ্ট উদ্বেগে ছিলেন।
সেই সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার যোগ্য চাকরিহারাদের সভায় বলেছিলেন, ‘যান না কাজে, কে যেতে বারণ করেছে আপানাদের? ভলান্টারি সার্ভিস সবাই দিতে পারে।’ তাঁর এই বক্তব্যে সদ্য চাকরিহারাদের মধ্যে আতঙ্ক কমার বদলে আরও বেড়ে গিয়েছিল। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় তাঁরাই ছিলেন। তাঁদের আশঙ্কা ছিল যে, তাঁরা আর স্থায়ী চাকরিজীবী হিসেবেই গণ্য হবেন না। স্যালারি পোর্টালে তাঁদের নাম থাকবে কি না, সেটাই ছিল মূল চিন্তা। এ দিন অবশ্য দেখা গেল, সমস্ত শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরই নাম রয়েছে i-osms পোর্টালে। এমনকী সুপ্রিম–নির্দেশে যাঁদের চাকরি গিয়েছে, ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’ নির্বিশেষে সবারই। পোর্টাল খোলার পরেই অনেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকারা স্যালারি সংক্রান্ত রিক্যুইজি়শন সাবমিট করে দিয়েছেন অনলাইনে। তার মধ্যে সুপ্রিম–নির্দেশে চাকরি যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতনও রয়েছে। এ বার চলতি মাসে সকলের মাইনে ঢোকার অপেক্ষা।
বিভিন্ন কারণে, স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা গত কয়েকদিনে সকলের বেতন অনলাইনে সাবমিট করার জন্য স্যালারি পোর্টাল খুলতে গিয়ে দেখেন, সেটি খুলছে না। ‘নো ডেটা ফাউন্ড’ দেখাচ্ছে। এমনকী, চাকরি যায়নি এমন শিক্ষকদেরও নাম, বেতন কাঠামো, ঋণ সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই। তাতেই দুশ্চিন্তা বাড়ে প্রধান শিক্ষকদের। চাকরিহারা শিক্ষকদের মনেও সন্দেহ জাগে, তা হলে কি তাঁদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য পোর্টাল বন্ধ রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তা হলে যোগ্যদের স্কুলে যাওয়ার কথা বললেন কেন? তৈরি হয় জটিলতা ও সংশয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষকরাও গত কয়েকদিনে বারবার করে পোর্টালটি খুলে দেখতে থাকেন।
কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনের (ভবানীপুর ব্রাঞ্চ) প্রধান শিক্ষক রাজা দে বলেন, ‘চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের নামও স্যালারি পোর্টালে থাকবে কি না, সেই আশঙ্কায় ছিলাম। এ দিন বিকেল তিনটি নাগাদ স্যালারি পোর্টাল খুলেছে। সেখানে আমাদের স্কুলের চাকরিহারা দুই শিক্ষক–শিক্ষিকারও নাম রয়েছে। আমি সব শিক্ষকের নাম বেতন পোর্টালে আপলোড করে দিয়েছি।’
এ দিনই অনলাইনে বেতন সাবমিট করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোলাড় সুশীলা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক সুরেশ পড়িয়া। এই স্কুল থেকে চারজন বিজ্ঞানের শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘স্যালারি পোর্টালে সমস্ত শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীর নাম রয়েছে। শিক্ষা দপ্তর আমাদের কাছে যেহেতু কোনও বিষয়েই কিছু নির্দেশ পাঠায়নি, তাই আমরা আগের মতোই সবার বেতন পাঠিয়েছি। এ বার সমস্ত শিক্ষককে স্কুলে আসার জন্য বলতে পারব।’
শালবনি নিচমঞ্জরী বালিকা বিদ্যালয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বাসবী ভাওয়াল বলেন, ‘সমস্ত শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরই নাম রয়েছে পোর্টালে। যদিও এই স্কুলেরও দু’জন শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছিল। সরকারি কোনও আলাদা নির্দেশ না–আসায়, আগের মতোই সকলের বেতন করা হবে।’ শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, সোমবার রাতে কলকাতা সহ কয়েকটি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকরা (মাধ্যমিক–ডিআই) প্রধান শিক্ষক–শিক্ষিকাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাতে স্পষ্ট করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, সরকারি
নির্দেশিকা না–পাওয়া পর্যন্ত আগ বাড়িয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ‘যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী অধিকার মঞ্চ’র তরফে উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহর আদর্শ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘আজ, রাজ্যজুড়ে সংমস্ত ডিআই অফিসে আমাদের বিক্ষোভ–অবস্থান কর্মসূচি ছিল। এতদিন বেতন সংক্রান্ত পোর্টাল না–খোলায়, আমরা আজ দুপুর দুটো পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। আমাদের আন্দোলনের চাপেই রাজ্য সরকার বেতনের পোর্টাল খুলতে বাধ্য হয়েছে।’