একেবারে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে জৈব সার তৈরি করে 'ঘরের মাঠেই' তৃণভোজী প্রাণীদের খাওয়ার উপযোগী ঘাস চাষ করছে কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। আর, সেই জৈব সার প্রস্তুত করা হচ্ছে চিড়িখানারই আবাসিক দু'টি হাতি ও একটি গন্ডারের মল দিয়ে! ঠিক যেভাবে গরুর মল বা গোবর জৈব সার তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়, একেবারে সেই পদ্ধতি মেনেই চিড়িখানা কর্তৃপক্ষ এই জৈব সার উৎপাদন করছে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, এই অভিনব ভাবনার নেপথ্যে রয়েছেন - চিড়িয়াখানার অধিকর্তা অরুণ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু, হঠাৎ এমন ব্যবস্থাপনার কথা মাথায় এল কেন? জানা গিয়েছে, কলকাতা চিড়িখানায় তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। হরিণ, ক্যাঙারু-সহ এমন পশু রয়েছে, যারা মূলত ঘাস খায়।
এই প্রাণীদের জন্য এত দিন ধরে বাইরে থেকে ঘাস কেনাই রেওয়াজ। কিন্তু, তাতে দু'টি সমস্যা রয়েছে। প্রথমত - সেই ঘাস কিনতে ভালোই রেস্ত খসাতে হয়। এবং দ্বিতীয়ত - বাইরে থেকে কেনা সেসব ঘাস চাষ করার জন্য খুব স্বল্প পরিমাণে হলেও রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। যা খাওয়া তৃণভোজী পশুদের স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেও ভালো নয়।
মূলত এই দুই সমস্যার মোকাবিলা করার জন্যই স্থির করা হয়, চিড়িয়াখানায় ফাঁকা জমিগুলি চিহ্নিত করে সেখানে ঘাস চাষ করা হবে। সেই মতোই হাতি ও গন্ডারের মল প্রথম তাদের খাঁচা থেকে সংগ্রহ করা হয়। তারপর তা কিছুদিন রোদে ফেলে রাখা হয়। তারপর সেই মল শুকিয়ে গেলে তা চিহ্নিত করা ফাঁকা জমির মাটিতে ভালো করে মিশিয়ে সেই জমিকে উর্বর করে তোলা হয়। তারপর সেই মাটিতেই চাষ করা হয় ঘাস। একইসঙ্গে - ভুট্টা, বাজরা, বরবটির মতো সবজির দানাও ছড়য়ে দেওয়া হয়। কারণ - তৃণভোজী প্রাণীরা এইসব গাছও কচি অবস্থায় খেতে খুব ভালোবাসে।
তবে, আলিপুর চিড়িয়াখানায় যে পরিমাণ ঘাসের প্রয়োজন, তার সবটা মোটেও এভাবে চাষ করা যাচ্ছে না। কারণ, কর্তৃপক্ষের হাতে তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জমিই নেই। আপাতত যেখানে যেখানে কিছুটা ফাঁকা জমি মিলেছে, সেখানেই ঘাসের চাষ করা হচ্ছে। আরও জমি এই কাজে ব্যবহার করা যায় কিনা, সেই খোঁজও চলছে।
প্রাথমিকভাবে ঘাস উৎপাদন করার জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দু'টি নার্সারি তৈরি করেছে। তার মধ্যে একটি রয়েছে গন্ডারের খাঁচার কাছে এবং অন্যটি গড়ে তোলা হয়েছে ক্যাঙারুর খাঁচার পাশে।