• সরকারি কর্তাকে ‘স্যর’ সম্বোধন না করায় অমিল ওষুধ! বিতর্ক, আইন কী বলছে?
    এই সময় | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • অসুস্থ গবাদি পশুর জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে বিপত্তি। সরকারি পশু চিকিৎসককে ‘স্যর’ না বলায় ওষুধই দেওয়া হয়নি এক গ্রামবাসীকে, অভিযোগ এমনই। জলপাইগুড়ির বানারহাট ব্লকের গয়েরকাটায় ব্লক প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বুধবারের ঘটনা। কেন ওই পশু চিকিৎসককে ‘দাদা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে তা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত। ঘটনা ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। অভিযোগ, এই নিয়ে কথা বলতে গেলে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও অভিযুক্ত ভেটেরিনারি অফিসার দুর্ব্যবহার করেন।

    স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্র মজুমদারের অভিযোগ, ‘স্যর না বলায় আমাকে ওষুধ তো দেওয়াই হয়নি, উল্টে নানা ভাবে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরকম ব্যবহার আশা করিনি।’ এই ব্যাপারে জলপাইগুড়ি জেলার প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর সুবোধ পালকে ফোন করা হলে ‘এই সময় অনলাইন’-কে তিনি বলেন, ‘এমন একটি ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’ দপ্তরের কর্তাদের দাবি, ওই কেন্দ্র থেকে ওযুধ পেতে অসুবিধা হয় বলে জানা নেই। ওই পশু চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও এর আগে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। হঠাৎ করে কেন এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখতে হবে।

    এই ঘটনা যদিও এই প্রথম নয়, পুলিশ অফিসারকে ‘দাদা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন এক শিক্ষক। আর তাতেই ওই শিক্ষককে চড় মারেন একজন ASI। গত বছরই পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটে ওই ঘটনা ঘটেছিল। তার আগে জলপাইগুড়িতে কর্মরত এক বিডিও ‘দাদা’ ডাক শুনে আপত্তি করেছিলেন। ২০১৭ ব্যাচের ওই অফিসার বলেছিলেন, ‘বিডিও কখনও আপনার দাদা হতে পারে না।’

    আইনজীবীরা বলছেন , ‘এখানে দাদা বলায় কোনও অপরাধ হয়েছে বলে মনে হয় না। উল্টে যদি স্যর না বলায় কেউ পরিষেবা না দেন, সেটা অনেক বড় অপরাধ বলেই মনে হয়।’

    রাজ্যের প্রাক্তন আমলা সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘এরকম কোনও নিয়ম নেই। অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসেবে কাজ করার সময়ে অনেকে সাধারণ মানুষ দাদা বলে সম্বোধন করেছেন। কোনও সময়ে মনে হয়নি, কেউ বড় অপরাধ করেছেন। আইনেও কোথাও বলা নেই, স্যর বলতে হবে।’

    বর্তমানে পুলিশ-প্রশাসনের বহু কর্তাই এই বিষয়গুলিকে খুব সহজভাবে নেন। জেলায় জেলায় বহু বছর ধরে প্রচারের আড়ালে থেকে বহু WBCS, WBPS অফিসার বেকার যুবক যুবতীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছেন। সরকারি চাকরি পেতে ‘বেকার’-দের সাহায্য করে চলেছেন। জেলায় থাকার সময় অনেকেই ‘দাদা-দিদি’ডেকে বন্ধুত্ব তৈরি করেন। কেউ বা পেশাদারি ভাবমূর্তি রেখে চলাই পছন্দ করেন। এই সিদ্ধান্ত একেবারেই ওই কর্তার ব্যক্তিগত। কোন অফিসারকে কে 'স্যর’ বলে সম্বোধন করবেন আর কাকে নয়, চাকরিতে জয়েনিংয়ের পর ট্রেনিং পর্বেও সেগুলিও বলে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে সম্পর্কের ভিত্তিতে সেক্ষেত্রেও বদল হয়। জুনিয়র ব্যাচের অফিসাররা অনেক সিনিয়রদেরও দাদা সম্বোধন করেন। সরকারি কর্তারা মানছেন, সার্ভিস ম্যানুয়ালের কোথাও এ কথা নেই।

  • Link to this news (এই সময়)