• চাকরি নেই, বিয়ের বাজারে দর কমছে শিক্ষকদের
    এই সময় | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    হাওয়া বদল। নাকি পাশা বদল। সুপ্রিম রায়ের পরে বিয়ের বাজারে শিক্ষকদের ডিমান্ড এখন তলানিতে। মালদার কয়েক জন ঘটকের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গিয়েছে। প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের খবরের পরে ঘটকদের মোবাইলে সাধারণ পাত্রের খোঁজে ফোন আসছে। মোটরবাইক বা সাইকেল নিয়ে পাত্রীর বাড়িতে ছুটে যাচ্ছেন তাঁরা। মাস্টার ছেড়ে ভদ্র, কর্মঠ, বেসরকারি সংস্থায় কাজ করা পাত্র নিয়ে রেষারেষি শুরু হয়ে গিয়েছে ঘটকদের মধ্যে।

    ইংরেজবাজার পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজী সুভাষ রোড সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ঘটক জীবন দাসের পানের দোকান। তাঁর কাছে রয়েছে পাত্রপাত্রীর ছবি সাঁটানো বিরাট খাতা। বুধবার সেই জাবেদা খাতা ডাইরি থেকেই কয়েকটি সরকারি স্কুল মাস্টার পাত্রের ছবি সরিয়ে ফেলেছেন জীবন।

    মাস্টারের সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধ করে পরে যদি কিছু হয়, তা হলে তো আমার ব্যবসা লাটে উঠবে। চার জন পাত্রীর বাবাকে ব্যবসায়ী ও বেসরকারি চাকুরের ছবি দেখিয়েছি

    জীবন দাস, ঘটক

    কেন? তিনি বলেন, ‘যা চলছে তাতে আর ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। মাস্টারের সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধ করে পরে যদি কিছু হয়, তাহলে তো পাত্রীর পরিবারের জ্বালায় আমার ব্যবসা লাটে উঠবে।’ জীবন জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে চার জন পাত্রীর বাবাকে ব্যবসায়ী ও বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত পাত্রের ছবি দেখিয়েছেন। রবিবার এক জনের পাকা কথা হয়েছে।

    ইংরেজবাজার পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধ রোড সংলগ্ন এলাকায় থাকেন সুবিনয় চক্রবর্তী। পেশায় মুদি ব্যবসায়ী। একমাত্র মেয়ে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়েন। সুশ্রী, ঘরোয়া কাজ জানা একমাত্র মেয়ের জন্য পাত্রের সন্ধান চেয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। এ দিন সুবিনয়ের কাছে ফোন আসে। পাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শুনেই আঁতকে ওঠেন তিনি। গিন্নির সঙ্গে কথা বলে মাস্টার পাত্রের সম্বন্ধ বাতিল করে দেন তিনি।

    সুবিনয় বলেন, ‘যা চলছে তাতে আর কোনও ভাবেই মেয়ের জন্য মাস্টার পাত্রের খোঁজ করছি না। ভালো ব্যবসায়ী বা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ভালো ছেলে পেলেই মেয়ের বিয়ে দেব বলে ঠিক করেছি।’ কেন এই সিদ্ধান্ত? তাঁর মন্তব্য, ‘সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের জীবন নিয়ে যে ভাবে ছিনিমিনি খেলা চলছে, তাতে মেয়ের সম্বন্ধ হলে বাড়তি ঝুঁকি। একটা চাপও বটে। তাই সাধারণ ভালো চরিত্রের পাত্র হলেই মেয়ের বিয়ে দেব।’

    মেয়ের বাড়ির লোকেরা স্কুলের মাস্টারদের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে কেন? মাস্টার পাত্র শুনলেই কেমন যেন অনেক মেয়ের বাবা-মা আঁতকে উঠছেন। এতদিন তো সরকারি স্কুলের মাস্টারদের ডিমান্ড ছিল। এখন সেটা কি কমতে শুরু করেছে। ইংরেজবাজার শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গৌড় রোড এলাকায় থাকেন সন্তু বিশ্বাস। রাস্তার পাশে চা– তেলেভাজার দোকান রয়েছে তাঁর। সঙ্গে ঘটকালিও করেন।

    গত সপ্তাহে সরকারি স্কুলের মাস্টারদের চাকরি বাতিলের ঘটনার পরে তাঁর চায়ের দোকানে অনেক পাত্রীর বাবা এসে মাস্টার পাত্র নাকচ করে দিয়েছেন। সন্তু বলেন, ‘যে ভাবে মাস্টারদের চাকরি নিয়ে গোলমাল চলছে, তার পরেও ঘটকালির ব্যবসা যে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেটা আমার কাছে মিরাকল। মাত্র এই ক'দিনে দু'জোড়া পাত্রীর বিয়ে পাকা করে ফেলেছি। ভালো রোজগারও হয়েছে। পাত্ররা অবশ্য ব্যবসায়ী।’

  • Link to this news (এই সময়)