‘পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দাও’! কসবাকাণ্ডে ভিডিয়ো প্রকাশ করে ‘সামান্য বলপ্রয়োগের’ কারণ ব্যাখ্যা কলকাতা পুলিশের
আনন্দবাজার | ১০ এপ্রিল ২০২৫
বিনা প্ররোচনায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর চড়াও হয়েছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়েই পুলিশকে ‘হালকা বলপ্রয়োগ’ করতে হয়েছে। কসবার ঘটনায় এই মর্মেই সাফাই দিয়েছিল পুলিশ। এ বার এক্স হ্যান্ডলে ভিডিয়ো পোস্ট করে তারা জানাল, কোন পরিস্থিতিতে তাদের ওই পদক্ষেপ করতে হয়েছে। পুলিশের পোস্ট করা একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, এক বিক্ষোভকারী বলছেন, ‘‘পেট্রল নিয়ে আয়, জ্বালিয়ে দেব।’’ যদিও ভিডিয়োটির সত্যতা আনন্দবাজার ডট কম যাচাই করেনি।
বুধবার জেলায় জেলায় ডিআই দফতর অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন চাকরিহারারা। সকাল থেকেই জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়। কসবার ডিআই দফতরেও জড়ো হয়েছিলেন অনেকে। তাঁরা চেয়েছিলেন স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দিতে। কিন্তু স্কুল পরিদর্শক দফতরে ছিলেন না। অভিযোগ, ওই সময় আচমকাই কয়েক জন বিক্ষোভকারী ডিআই দফতরের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুলিশ তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করায় তাদের সঙ্গেও বচসা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তা গড়ায় ধস্তাধস্তি, হাতাহাতিতে। ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও লাঠিচার্জ করে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশ তাঁদের বেধড়ক মারধর করেছে। কাউকে মাটিতে ফেলে বুকে-পেটে লাথি মারা হয়েছে। কাউকে গলাধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি ছবি-ভিডিয়োও ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। আনন্দবাজার ডট কম সেগুলিরও সত্যতা যাচাই করেনি।
গোটা ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। বিক্ষোভকারী চাকরিহারাদের লাথি মারা নিয়ে কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মা সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘ওই ভাবে লাথি মারা কখনওই কাম্য নয়। পুলিশকর্মীদের বলাই হয়েছে, এ রকম যাতে কিছু না ঘটে।’’ কিন্তু সিপির বক্তব্য, যে ছবি-ভিডিয়ো দেখানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ নয়। আগে-পিছনে আরও কিছু রয়েছে। পুলিশেরও ছ’জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চার জন পুরুষ পুলিশকর্মী। দু’জন মহিলা। এক জন সার্জেন্ট গুরুতর জখম। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এর পরেই বৃহস্পতিবার এক্স হ্যান্ডলে কয়েকটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে কলকাতা পুলিশ। তাদের দাবি, ভিডিয়োগুলি কসবায় ডিআই দফতরের সামনে চাকরিহারাদের বিক্ষোভের সময়কার। ভিডিয়ো প্রকাশের পাশাপাশি এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘‘কিছু অসাধু ব্যক্তি গুজব ছড়াচ্ছেন যে, কলকাতা পুলিশের পোস্ট করা ভিডিয়োগুলি নাকি গতকালের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এ বিষয়ে স্পষ্ট করে জানানো হচ্ছে, শুধুমাত্র উপস্থাপনার স্বার্থে একাধিক ক্লিপ একত্র করে একটি ভিডিয়ো তৈরি করা হয়েছে। নীচে পৃথক ক্লিপগুলি দেওয়া হল, যার মধ্যে একটি ক্লিপে এক প্রতিবাদকারীকে ‘পেট্রল দিয়ে জায়গাটা জ্বালিয়ে দাও’ বলতে শোনা যাচ্ছে।’’ পুলিশের দাবি, ‘‘এই ধরনের অবিরত আগ্রাসী আচরণের মুখোমুখি হয়ে কলকাতা পুলিশ আত্মরক্ষার্থে সামান্য বলপ্রয়োগ করতে এবং উচ্ছৃঙ্খল ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে বাধ্য হয়।’’
প্রসঙ্গত, কসবার ঘটনাকে ‘অনভিপ্রেত’ বলেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থও। তিনি বলেন, ‘‘সকলের কাছেই অনুরোধ, এমন পরিস্থিতি যেন আর তৈরি না হয়।’’ তবে মুখ্যসচিব জানান, কারও কথায় বা উস্কানিতে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা বা তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয়। সেখানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে বাধ্য হয়েই পুলিশকে ওই পদক্ষেপ করতে হয়েছে। চাকরিহারাদের আশ্বাস দিতে গিয়ে তিনি জানান, ইতিমধ্যেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে স্থিতাবস্থা চেয়ে আবেদন করেছে। সরকারও শীঘ্রই রায় পর্যালোচনার আবেদন করবে শীর্ষ আদালতে। মনোজের কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনেই পদক্ষেপ করতে হচ্ছে। সেখান থেকে আরও ব্যাখ্যা পাওয়া গেলে সেইমতো আরও পদক্ষেপ করা হবে। সরকার এবং প্রশাসন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গেই রয়েছে।’’
চাকরিহারাদের কয়েক দিন ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি জানান, চলতি সপ্তাহেই তাঁর নেতৃত্বে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে চাকরিহারাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। অন্তত ওই বৈঠক পর্যন্ত তাঁদের ধৈর্য ধরা উচিত। শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, ‘‘এক দিকে বৈঠক, অন্য দিকে ধ্বংসাত্মক আন্দোলন, দুটো একসঙ্গে চলতে পারে না।’’