• ‘রাজ্যপাল ডেকে পাঠাবেন, আলোচনা করবেন, এ রকম সংবিধানে বলা নেই’! এ বার বিধি স্মরণ করালেন মন্ত্রী
    আনন্দবাজার | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • সুপ্রিম কোর্ট তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে তাঁর ‘কর্তব্য’ স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। পর্যবেক্ষণে শীর্য আদালত জানিয়েছিল, রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপালদের ঝুলিয়ে রাখা ‘বৈধ’ নয়। সেই পর্যবেক্ষণের পর থেকেই এ রাজ্যে রাজ্যপাল এবং নবান্নের তরজা চলছে। রাজভবনের তরফে বিবৃতি দিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বুধবার জানিয়েছিলেন, বেশ কিছু বিলে অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের ডেকে পাঠানো বা তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করার অধিকার রাজ্যপালকে দেয়নি সংবিধান।

    সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের পরে এ রাজ্যের রাজ্যপালকে তাঁর ‘কর্তব্য’ মনে করিয়েছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, বিধানসভায় পাশ হওয়ার পরেও রাজ্যপালের কাছে কত সংখ্যক বিল আটকে রয়েছে। তার পরেই বুধবার রাজ্যপাল ব্যাখ্যা দেন, কিছু বিল কেন তাঁর কাছে আটকে রয়েছে! এই নিয়ে বৃহস্পতিবার আবার সংবিধানের প্রসঙ্গ তুললেন রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব। তিনি জানালেন, সংবিধানে ঠিক কী লেখা রয়েছে। শোভনদেবের কথায়, ‘‘সংবিধানে পরিষ্কার করে লেখা রয়েছে, অনির্দিষ্ট কালের জন্য কোনও বিল আটকে রেখে দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যপালের নেই।’’ তার পরেই তিনি জানিয়ে দেন, ঠিক কোন বিষয়গুলিতে নবান্নের আপত্তি রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বিল সংক্রান্ত আইনগত বিষয় থাকলে রাজ্যপাল চিঠি লিখে সরকারকে জানিয়ে দেবেন। তিনি ডেকে পাঠাবেন, আলোচনা করবেন এ রকম কথা বলা নেই। আমি অনেক বার সংবিধান পড়েছি।’’

    শোভনদেব আরও বলেন, ‘‘যে যে বিষয় নিয়ে রাজ্যপালের বক্তব্য রয়েছে, তা সরকারকে জানাবেন। কিন্তু বিল পাশ করে দিতে বাধ্য থাকবেন। একান্ত না হলে রাষ্ট্রপতিকে পাঠাতে পারেন।’’ রাজ্যাপালের দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘‘ওঁর কাছে একটার পর একটা বিল আটকে থাকছে। এটা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ।’’ রাজ্যপালের পদ নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। শোভনদেবের কথায়, ‘‘বিভিন্ন বিধানসভায় বার বার কথা উঠছে যে, এই রাজ্যপাল পদটি থাকার প্রয়োজন নেই। সুপ্রিম কোর্ট সঠিক রায় দিয়েছে। সব রাজ্যপালের তা মেনে নেওয়া উচিত। এই রাজ্যপালের কোনও প্রতিক্রিয়া দেখিনি।’’

    গত মঙ্গলবার বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চে প্রশ্নের মুখে পড়েন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবি। বেঞ্চ জানায়, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপাল আটকে রাখলে, তা বৈধ নয়। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের পরেই রাজ্যের স্পিকার বিমান বলেছিলেন, ‘‘এটা নিয়ে আমাদের রাজ্যপালকে আমরা বলেছি বার বার। ২০১৬ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলের মধ্যে এমন ২৩টি বিল রয়েছে, যেগুলিতে সম্মতি দেননি রাজ্যপাল। এগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিলও রয়েছে। যেমন অপরাজিতা বিল। গণপিটুনি বিল।’’ এর পরেই বুধবার রাজভবনের তরফে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে আটকে থাকা বিল নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে রাজভবন। বিবৃতিতে রাজভবন জানায়, ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের মধ্যে রাজ্যপাল মোট ১১টি বিল রাষ্ট্রপতির কাছে বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছেন। এই বিলগুলির মধ্যে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত এবং একটি অপরাজিতা বিল। যা আরজি কর-কাণ্ডের পর ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কড়া শাস্তি দিতে পাশ করিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিছু বিলে সম্মতি দেওয়ার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারের কাছে বেশ কিছু তথ্য তলব করেছে রাজভবন। এই ধরনের বিলের উপযুক্ত জবাব বা তথ্য রাজভবন পায়নি বলেই জানিয়েছিল তারা। রাজভবনের তরফে জানানো হয়েছে, ২৩টির মধ্যে পাঁচটির ক্ষেত্রে রাজ্যপাল সরাসরি সচিবের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন।

    কোন পাঁচটি বিল?

    • ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি (প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট) বিল ২০২৩ (সংশোধনী)’। এই বিলটির ক্ষেত্রে দফতরের প্রিন্সিপাল সচিবকে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে।

    •‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল লেবার ২০২৩ (সংশোধনী)’। এই বিলটির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মুখ্যসচিবকে তলব করেছেন রাজ্যপাল।

    •‘বেঙ্গল অ্যালুভিয়াল ল্যান্ড বিল ২০২৩ (বাতিল)’। এর জন্য দফতরের সচিব এবং রাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি আলোচনা করতে বলা হয়েছে রাজভবনের তরফে।

    •‘কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন ২০২৩ বিল (সংশোধিত)’। এই প্রিন্সিপাল সচিবের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষ বলে জানিয়েছিল রাজভবন।

    •‘দ্য কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিওর (পশ্চিমবঙ্গ সংশোধনী) ২০১৮’। এই বিলের জন্য রাজ্যপাল জানান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই নিয়ে যে ব্যাখ্যা চেয়েছিল, তা জানাতে হবে রাজ্যকে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)