তৃণমূলের ‘কলকাঠি’তে বাংলো ‘হাতছাড়া’ হতে চলেছে দিলীপের? আধিকারিককে শো কজ় করল রেল
আনন্দবাজার | ১০ এপ্রিল ২০২৫
খড়গপুর শহরে রেলের একটি বাংলোতে থাকেন বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ। নিয়ম অনুযায়ী, থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কেন সেই বাংলোটি দখল করে রাখা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে এক আধিকারিককে শো কজ় করল রেল। রেলের ওই বাংলোটি দখল করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল তৃণমূল। ঘটনাচক্রে, তার পরেই রেলের এই পদক্ষেপ। যার ফলে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ওই বাংলোয় আপাতত আর থাকতে পারবেন না দিলীপ? বাংলো কি হাতছাড়া হল? দিলীপ অবশ্য বলেন, ‘‘প্রতি বছরই এ রকম নোটিস আসে। প্রতি বছরই নতুন করে আবার বাংলো বরাদ্দ করা হয়। এটা নতুন কিছু নয়। যা হচ্ছে, নিয়ম মাফিকই হচ্ছে।’’
রেলের প্যাসেঞ্জার সার্ভিস কমিটির প্রাক্তন সদস্য তুষারকান্তি ঘোষের নামে বরাদ্দ ছিল বাংলোটি। তাঁকেই বাংলো খালি করে দিতে বলা হয়ছে। বাংলোর দেওয়ালে দু’পাতার নোটিস লাগিয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর এস্টেট অফিসার। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কেন বাংলো ছেড়ে দেওয়া হয়নি, আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে তুষারকে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, ২১ এপ্রিলের মধ্যে খড়্গপুর ডিভিশনের এস্টেট অফিসারের কাছেও সশরীরের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে তাঁকে।
সম্প্রতি তৃণমূলই দিলীপের বিরুদ্ধে রেলের সম্পত্তি জবরদখলের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল। তার পরেই রেলের এই পদক্ষেপ। গত পাঁচ বছর ধরে ইলেক্ট্রিক বিল-সহ কোনও ভাড়া না-মেটানোরও অভিযোগ উঠেছে তুষারের বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘অবশেষে রেল নোটিস ধরিয়েছে। রেলকে ধন্যবাদ। এত দিনে সত্যের জয় হল। এর দায় সম্পূর্ণ ভাবে দিলীপ ঘোষের।’’
দিলীপ বলেন, ‘‘তৃণমূলের খেয়েদেয়ে কোনও কাজ নেই। তাই আমার বাসস্থান নিয়ে হইচই করছে। কিন্তু তৃণমূল নিজে রেলের জায়গা দখল করে যে সব বড় বড় পার্টি অফিস বানিয়ে রেখেছে, সেগুলোর কী হবে? ওই জায়গা তৃণমূলকে কে দিয়েছে? কোন কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ করেছেন? তৃণমূল নিজে আগে উত্তর দিক।’’
প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে দেবাশিস জানিয়েছিলেন, তিনি তথ্যের অধিকার আইনে জানতে চেয়েছিলেন যে, দিলীপ খড়্গপুরে যে বাংলোয় থাকেন, সেটি কারও নামে বরাদ্দ রয়েছে কি না। উত্তর আসে, বাংলোটির নম্বর ৬৭৭। সেটি রেলের প্যাসেঞ্জার সার্ভিস কমিটির প্রাক্তন সদস্য তুষারকান্তির নামে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বরাদ্দ ছিল। তার পর থেকে বাংলোটি আর কারও নামে বরাদ্দ নেই।
এ নিয়ে দিলীপকে সমাজমাধ্যমে বিঁধেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ বলেছেন সবই রামের ইচ্ছায় হয়! তা হলে একটি প্রশ্ন, যে বাংলোটিতে দিলীপবাবু খড়্গপুরে গেলে থাকেন, ভগবান রামের ইচ্ছাতেই কি এই জবরদখল? তথ্য বলছে, বাংলোটির ব্যবহারকারীর মেয়াদ শেষ ২০২০ সালে। তার পাঁচ বছর পরেও দিলীপবাবু ওটা ব্যবহার করছেন কী করে? কারা দখল করে রেখেছে? কেন বিনা অনুমোদনে ব্যবহার চলছে?’’
পাল্টা দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘আমি যে বাংলোয় আছি, সেটি রেল কমিটির মেম্বারের নামে রয়েছে। কমিটি নেই এখন। কমিটি তৈরি হলে আবার বরাদ্দ হবে। আমি সেখানে এমএলএ, এমপি হিসাবে মানুষকে পরিষেবা দিয়েছি। এখনও তা-ই চলছে।’’ কুণালের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, ‘‘৬ বছর নয়, ৮ বছর ধরে আছি আমি ওখানে। কুণাল ঘোষের কাছে তথ্য নেই। কুণাল ঘোষের প্রশ্নের জবাব দিলীপ ঘোষ দেবে না। দম থাকলে আসুক। প্রতি ওয়ার্ডে তৃণমূলের লোকেরা রেলের জায়গা দখল করে রয়েছে। ব্যবস্থা করছে নির্মাণ করে।’’