চলতে চলতেই হাতের কাছে পাওয়া যাবে বই, ডিজিটাল যুগে বই পড়ার অভ্যাস তৈরিতে অভিনব উদ্যোগ ...
আজকাল | ১১ এপ্রিল ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সঙ্গে সংস্কৃতি এবং বই পড়ার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আর বই পড়ার কথা বললে অনেকেরই চোখের সামনে ভেসে ওঠে শহর বা গ্রামাঞ্চলের ছোট্ট লাইব্রেরিগুলির কথা। যা দীর্ঘ বহু বছর ধরে বাঙালির জীবনে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
ডিজিটাল যুগে এখন মোবাইল এবং ইন্টারনেট মানুষের বেশিরভাগ সময় দখল করে নিচ্ছে। যুবসমাজের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ দিন দিন কমছে বলেও দাবি অনেকের। এখন শহর বা গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ লাইব্রেরিগুলিতে উপন্যাস, গল্প ,কবিতা শিশু সাহিত্যের বইগুলোতে ধুলোর পাহাড় জমছে।
তবে শত প্রতিকূলতা থাকলেও মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুরে সাধারণ পাঠকদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে নেওয়া হল ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। কিছু বইপ্রেমী মানুষের তরফ থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের কাছে চালু হল একটি 'স্ট্রিট লাইব্রেরি'।
অস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শহরগুলিতে 'স্ট্রিট লাইব্রেরি' জনপ্রিয় হলেও আমাদের রাজ্যে এখনও তেমনভাবে নতুন ধরনের এই লাইব্রেরির ভাবনা জনপ্রিয় হয়নি।
এটা হল এমন একটি উন্মুক্ত পড়ার জায়গা যেখানে রাস্তার ধারে বা জনসমাগম হয় এমন এলাকায় র্যাক বা আলমারির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বই রাখা থাকে। যে কেউ সেখানে গিয়ে বিনামূল্যে বই পড়তে পারেন। আবার নিজের পড়া হয়ে গেলে ভালো লাগার বই অন্যের পড়ার জন্য সেখানে রেখে আসতে পারেন। বই আদান প্রদানের উপর ভিত্তি করে চলা এই লাইব্রেরির মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের মধ্যে বইয়ের প্রতি ভালবাসা গড়ে তোলা এবং তা ছড়িয়ে দেওয়া।
বহরমপুর শহরের 'চৌতারা'য় কয়েকজন শিক্ষা অনুরাগীদের উদ্যোগে চালু হওয়া অভিনব এই এই লাইব্রেরিতে আপাতত ত্রিশটি বই রয়েছে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে জীবনানন্দ দাশ, যেকোনও লেখকের বই সারা দিনের যেকোনও সময় সাধারণ পাঠক সেখানে বসে পড়তে পারেন। রয়েছে শিশু পাঠ্যের বেশ কিছু বইও। জেলারই একজন তাঁর বাবার স্মৃতির উদ্দেশ্যে দান করেছেন বই রাখার সেলফ এবং অন্যান্য কিছু জিনিসপত্র। অন্যতম উদ্যোক্তা অর্ধেন্দু বিশ্বাস বলেন, 'বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের চেতনার বিকাশ হয়।এই ধরনের লাইব্রেরি শহরের মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস আবার ফিরিয়ে আনবে বলে আমরা আশাবাদী।' অপর এক উদ্যোক্তা জানান, প্রতিদিন বহরমপুর শহরে 'চৌতারা' এলাকায় প্রচুর মানুষ কাজের জন্য এসে বিশ্রাম নেন। অনেকে ব্যারাক স্কোয়ার মাঠে 'মর্নিং ওয়াক' বা 'ইভিনিং ওয়াক' করার পরও 'চৌতারা'তে জড়ো হয়ে গল্প করেন। সেই সময় হাতের কাছে যদি প্রিয় পাঠ্য বইটি থাকে তাহলে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অনেকেই হয়তো প্রিয় বইয়ের পাতা উল্টে দেখবেন এবং সময়ও ভালো কাটবে। জানা গিয়েছে, এখানে বই পড়তে গেলে কাউকে কোনও সদস্যপদ নিতে হবে না। দিতে হবে না কোনও বার্ষিক বা মাসিক চাঁদা।