অর্ণব দাস, বারাসত: অতীতে রাজারাজড়া দের শিকার বিলাসের নানা কাহিনি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে। ইতিহাসের পাতায় তার বিশদ বিবরণ রয়েছে। আজকের দিনেও কারও কারও শিকারের নেশা আছে। সাঁওতালি সমাজে তো শিকার উৎসব একটা পরব। যদিও ইদানিং শিকার উৎসবে সত্যি সত্যি জঙ্গলে ঢুকে বন্যপ্রাণ ‘শিকার’ নিষিদ্ধ। প্রতীকী শিকারেই পরব উদযাপন হয় আজকাল। কিন্তু শিকারের নেশা প্রবল হয়ে গেলে মানুষ যে ‘খুনি’ হয়ে উঠতে পারে, তার প্রমাণ মিলল বারাসতের একটি ঘটনায়। রোজ পাখি মারার বন্দুক দিয়ে এবার পাড়ার সারমেয়কে খুনের অভিযোগ উঠল ২ যুবকের বিরুদ্ধে। প্রতিবেশীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়েছে। নৃশংসভাবে কুকুর হত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসত পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আরদেবক এলাকার বাসিন্দা সঞ্জীব ঘোষ। তাঁর ছেলে নাবালক। তাঁদের বাড়িতে দুটি পাখি মারার বন্দুক ছিল। অভিযোগ, নাবালক সেই ছেলে পাখি মারার বন্দুক নিয়ে রামনবমীর মিছিলে শামিল হয়েছিল। বারাসত থানার পুলিশ অবশ্য মিছিল থেকেই বন্দুকটি বাজেয়াপ্ত করেছে। তবে বাড়িতে ছিল দ্বিতীয় বন্দুকটি। অভিযোগ, এদিন গুণধর সেই নাবালক বন্ধুদের নিয়ে প্রায়ই এই বন্দুক দিয়ে পাখি মারত। বারবার বারণ করা সত্ত্বেও তা শুনত না। এনিয়ে বারাসত থানাতেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। পাখি শিকার চলতেই থাকে। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে ফের সেই বন্দুকের শব্দ শুনতে পান এলাকাবাসী। আগের তুলনায় এই শব্দ আরও তীব্র ছিল। চমকে উঠে দু, একজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন, রাস্তায় পাড়ার একটি কুকুরের মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। দেখেই তাঁরা বুঝতে পারেন যে বন্দুক চালিয়ে খুন করা হয়েছে সারমেয়টিকে।
খবর পাঠানো হয় বারাসত থানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ২ যুবককে আটক করে। তাদের কাছ থেকে বন্দুকটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সঞ্জীব ঘোষের ছেলের কাছেই অভিযুক্ত এসেছিল। বন্দুকটি সঞ্জীব ঘোষের। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ”ওই ছেলেটা প্রায়ই বন্দুক দিয়ে পাখি মারে। একদিন আমরা মাঠে কাজ করছিলাম। হঠাৎ আমার ছেলের পাশ দিয়ে সাঁ সাঁ করে গুলি চলে গেল। পরে আমার কানের পাশ দিয়েও এরকম শব্দ পেলাম। পরে জানলাম, ওই ছেলেটা গুলি চালিয়েছিল।” এদিনও তেমনই ঘটনায় প্রাণ গেল পাড়ার এক সারমেয়র। তা নিয়ে এলাকায় প্রবল উত্তেজনা। স্থানীয় ক্লাবের সম্পাদক দেবাশিস সামন্তের প্রতিক্রিয়া, ”এর আগেও এলাকার কয়েকজন ওদের পাখি মারার বন্দুকের গুলি থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। এদিনের ঘটনার পর অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”