• করোনার সময় অ্যাম্বুলেন্স, শববাহী গাড়ি চালিয়ে সম্মানিত দেবশ্রী ভট্টাচার্য
    বর্তমান | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: করোনার সময় আর পাঁচজন যখন ঘরবন্দি, তখন নিজের জীবন বিপন্ন করে পথে নামেন জলপাইগুড়ির দেবশ্রী ভট্টাচার্য ওরফে লতা। করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে পৌঁছে দিতে অ্যাম্বুলেন্সের স্টিয়ারিং ধরেন। শুধু তাই নয়, করোনায় আক্রান্ত মৃতদের শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার যখন কোনও শববাহী গাড়ির চালক মিলত না, তখনও এগিয়ে আসেন শহরের বেগুনটারির বাসিন্দা মধ্যবয়সি এই মহিলা। নিজেই শববাহী গাড়ি চালিয়ে হাসপাতাল, নার্সিংহোম থেকে দেহ পৌঁছে দেন শ্মশানে। বৃহস্পতিবার তারই স্বীকৃতি জানানো হল প্রশাসনের তরফে। ময়নাগুড়িতে দেবশ্রীর হাতে বিশেষ স্মারক তুলে দেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। 

    গত ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে কলকাতায় রাজ্যের তরফে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানেই আমন্ত্রিত ছিলেন দেবশ্রী। কিন্তু সেসময় তিনি যেতে পারেননি। যার কারণে এদিন তাঁর হাতে ওই সম্মান তুলে দেওয়া হয়। পঞ্চায়েতমন্ত্রীর হাত থেকে স্মারক পেয়ে খুশি ওই মহিলা। বলেন, আমি যা করেছি, তার জন্য গর্বিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, আমি মনে করি, মানুষ মানুষের জন্য। অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়ানোই মানবতা। 

    সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান দেবশ্রী জলপাইগুড়িবাসীর কাছে লতাদি নামেই পরিচিত। ছোট থেকেই তিনি সাহসী। বাবার সঙ্গে শিকারেও গিয়েছেন। ২২ বছর ধরে গাড়ি চালান তিনি। বেশ কিছু বছর দিল্লিতে ছিলেন। তাঁর কথায়, আমার নিজেরও করোনা হয়েছে। এরপর যখন শুনি করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালক মিলছে না, তখন আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি। বাড়িতে বৃদ্ধ মা ও মেয়েকে রেখে অ্যাম্বুলেন্সের স্টিয়ারিং ধরি। রাত জেগে শববাহী গাড়ি চালিয়ে শ্মশানে দেহ পৌঁছে দিয়েছি। সবটাই করেছি মানবতার টানে, স্বেচ্ছাশ্রম হিসেবে। তাঁর কথায়, করোনা পর্ব চলে যাওয়ার পর কয়েকটা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এই ক’বছরে বিভিন্ন সংস্থার তরফে অনেক সম্মান পেয়েছি। তবে দেরিতে হলেও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এদিন সম্মান পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)