সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: জলের মধ্যে ইট ফেলে তার উপর দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে রোগীদের। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। বৃহস্পতিবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিক আউটডোরে।
মনোরোগীদের চিকিৎসার এই আউটডোরে যে পথ দিয়ে ঢুকতে হয় তার গোটাটাই কাঁচা। কোনওদিন সিমেন্ট বা পিচ পড়েনি। বালি-পাথর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতের বৃষ্টিতে গোটা রাস্তা এবং আউটডোরের দরজা পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এখানে সমস্যার আর একটি দিক, জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে রোগীদের ডাক্তার দেখাতে হয়। এতে ভারসাম্যহীন রোগীদের ক্ষেত্রে পরিবারের লোকদের চূড়ান্ত হয়রান হতে হচ্ছে। এদিনও দেখা যায় রোগীরা জল ভেঙে সাইকিয়াট্রিক আউটডোরের গেটের সামনে যাচ্ছেন। তারপর লাইন দিয়ে জলের মধ্যে একটি করে রাখা ইটের উপর দিয়ে এক পা দুই পা করে হেঁটে ডাক্তার যেখানে বসে রয়েছেন সেই ঘরের জানালার সামনে পৌঁছচ্ছেন। ইটের উপর দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখাচ্ছেন।
ইসলামপুর থেকে এসেছিলেন মহম্মদ সাদিক। এখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা করাচ্ছেন। সাদিক বলেন, অনেকদিন ধরেই এখানে আসছি। এই পথ পাকা হয়নি। এবড়োখেবড়ো হয়ে রয়েছে। ফলে হুইল চেয়ারেও রোগী নিয়ে যেতে নাজেহাল হতে হয়। জল জমলেও জানালার সামনে জলের উপর দাঁড়িয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হয়। আমরা নিরুপায়, তাই সব সহ্য করে ডাক্তার দেখাতে আসি।
প্রতিটি রোগীর মধ্যেই এনিয়ে এদিন বিস্তর ক্ষোভ দেখা গিয়েছে। অথচ আর জি কর কাণ্ডের পর থেকে অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও নানা কর্মকাণ্ড চলছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সিসি ক্যামেরায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে। ডাক্তারদের নিরাপত্তার জন্য রেস্টরুম, টয়লেট নতুন করে হয়েছে। অথচ রোগীদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা কেউ ভাবে না। দুর্ভোগ কমানোর জন্য কোনও উদ্যোগ নেই। কেউ কোনও প্রস্তাবও দেয়নি। হতাশার সঙ্গে এদিন একথা বলেন কোচবিহারের শ্যামল বর্মন। তিনি তাঁর ছেলেকে এখানে গত ছ’মাস ধরে চিকিৎসা করাচ্ছেন। তিনি বলেন, একটা গুরুত্বপূর্ণ আউটডোর। প্রতিদিন প্রচুর রোগী হয়। অনেক দূর থেকে বহু রোগী আসেন। বেশির ভাগই মানসিক ভারসাম্যহীন। এ ধরনের আউটডোরে রোগীদের জন্য শান্তির পরিবেশ বজায় রাখা উচিত। তার পরিবর্তে এখানে এসে বিপর্যস্ত হতে হয়। জল ভেঙে ইটের উপর দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে। চূড়ান্ত অবহেলায় এই আউটডোর চলছে। রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকদের সমস্যার কথা কেউ ভাবে না।
হাসপাতাল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক বলেন, সাইকিয়াট্রিক আউটডোর ও ইন্ডোর নতুন করে তৈরি হবে। তারজন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেই প্রস্তাব অনুমোদন পেলে নতুন করে সাইকিয়াট্রিক কমপ্লেক্স তৈরি হবে। বৃষ্টির জল যাতে না জমে তারজন্য ওখানে এরমধ্যেই মাটি ফেলা হবে।