তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যর স্বামীর বিরুদ্ধে অবৈধ বালি খাদান চালানোর অভিযোগ
বর্তমান | ১১ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: চৈত্রের শেষে মহানন্দায় এখন জল নেই বললেই চলে। চারিদিকে শুধুই বালির স্তর। নদীবক্ষের সেই বালির ওপরে দাঁড়িয়ে একটি আর্থমুভার। যা দিয়ে নদী থেকে একনাগারে বালি তুলে যাচ্ছে মাফিয়ারা। পাশেই দাঁড়িয়ে তিনটি ট্রাক্টরট্রলি। আর্থমুভার দিয়ে তোলা বালি বোঝাই করা হচ্ছে সেই ট্রাক্টরট্রলিতে। ইংলিশবাজার ব্লকের যদুপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের রায়পুরের মেলাঘাটে এটা প্রায় প্রতিদিনের দৃশ্য। দিনের পর দিন প্রশাসনের নাকের ডগায় এই অবৈধ বালি খাদান চালাচ্ছেন তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী শিস মহম্মদ ওরফে জুলুম! মহানন্দা থেকে অবৈধভাবে তোলা বালি পাঠানো হচ্ছে নির্দিষ্ট ঠিকানায়। তা বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার টাকায়। বৃহস্পতিবার এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন মালদহ সদর মহকুমা শাসক পঙ্কজ তামাং, পুলিস এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকরা। যদিও প্রশাসনের কর্তারা যাওয়ার আগেই বাড়ি থেকে বেপাত্তা পঞ্চায়েত সদস্যা এবং তাঁর স্বামী জুলুম। প্রশাসনের কর্তারা অভিযুক্তের বাড়ি গেলে তাঁর মেয়ে রীতিমতো মহকুমা শাসকের সঙ্গে দুর্ব্যাবহার করে।
তবে মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমিরাজস্ব) দেবহুতি ইন্দ্র বলেন, আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে এই ক্ষেত্রে জরিমানা ধার্য করা হবে। গাড়িগুলো বাজেয়াপ্ত করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে সংবাদমাধ্যম ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কিন্তু অবৈধ বালি খননের ছবি তোলা হলেও মাফিয়াদের শরীরী ভাষা যেন ‘কুছ পরয়া নেহি’। সেখানে মহানন্দা নদীর ঘাটে নেমে বালি খননের দৃশ্য দেখে চক্ষুচড়ক গাছ মহকুমা শাসকের। প্রশাসনিক কর্তাদের সামনে পেয়ে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে অবৈধ বালি খাদানটি চালাচ্ছেন জুলুম। স্থানীয় যুবক জহিরুল শেখ বলেন, জুলুম শেখ গত দশবছর ধরে নদী থেকে বালি তুলছেন। এদিন মহকুমা শাসকের নেতৃত্বে সরেজমিনে তদন্ত করে চারটি বালি মজুত ভাণ্ডারের হদিশ পেয়েছে প্রশাসন। মালদহের সদর মহকুমা শাসক পঙ্কজ তামাং বলেন, ইংলিশবাজার ব্লকের যদুপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মহানন্দা নদী থেকে অবৈধভাবে বালি তোলা হচ্ছিল। জুলুম শেখ নামে এক ব্যক্তি এই অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে। অভিযুক্ত ও তাঁর স্ত্রীকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
এখানেই শেষ নয়,জুলুমের বাড়িতে গেলে তাঁর মেয়ে প্রথমে মহকুমা শাসকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। পরে সে দাবি করে, তার মা এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছে। তার বাবা চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুতে আছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,ওই দম্পতি এখানেই আছে। তাঁরা এখন প্রশাসনের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। অভিযুক্তদের বারবার ফোন করা হলে মোবাইল ফোন সুইচ অফ পাওয়া যায়। নিজস্ব চিত্র।