• আড়াইবছর বন্ধ তুলসীহাটা পল্লীমঙ্গল সরকারি পাঠাগার
    বর্তমান | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, হরিশ্চন্দ্রপুর: একমাত্র কর্মী অবসর নিয়েছেন। নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। যার জেরে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে তালাবন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের তুলসীহাটা পল্লীমঙ্গল সরকারি পাঠাগার। যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান বই। খারাপ হতে বসেছে কম্পিউটারও। পাঠক থেকে স্থানীয়রা বারবার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনেছেন। অভিযোগ, কোনও পদক্ষেপ হয়নি। সরকারি পাঠাগারের এহেন দশায় ক্ষুব্ধ পাঠকমহল। দ্রুত কর্মী নিয়োগ করে পাঠাগার চালুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাধীনতার আগে স্থানীয় বাসিন্দা ফুলচাঁদ মুরারকা ও দুই ভাই তারাপদ মৈত্র এবং কালীপদ মৈত্র সহ আরও কয়েকজন মিলে কালীপদ মৈত্রের বাড়িতে বান্ধব পাঠাগার চালাতেন। পরবর্তী সময়ে কালীপদবাবুর মেজো ছেলে বীরেন্দ্রকুমার মৈ (বিশুবাবু) বাবার দানকৃত ১৫শতক জমিতে পল্লীমঙ্গল সমিতি স্থাপন করেন। তখন বিশুবাবু আদি কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। এরপর বিশুবাবুর ছোট ভাই সুনীলকুমার মৈত্র এবং কামার্তার যামিনীরঞ্জন সিংহ অবৈতনিক গ্রামীণ পাঠাগার চালু করেন। তারপর ১৯৬২সালে সরকারিভাবে গড়ে ওঠে তুলসীহাটা পল্লীমঙ্গল পাঠাগার। এক সময় গ্রামের বহু মানুষ নিয়মিত এই পাঠাগারে আসতেন। কিন্তু সরকারি কর্মী না থাকার কারণে ধীরে ধীরে তাঁরা আসা বন্ধ করে দেন। এই নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। অবসরপ্রাপ্ত জুনিয়র লাইব্রেরি অ্যাটেনডেন্ট লাড্ডুলাল রবি দাস বলেন, লাইব্রেরিতে পাঠক সংখ্যা ছিল প্রায় আট শতাধিক। বই রয়েছে ৯ হাজারের বেশি। ২০১৬ সালে গ্রন্থাগারিক আশিষ সিনহা অবসর নেওয়ার পর এক বছর করে চার্জ দেওয়া হয় পিপলা পল্লীমঙ্গল সমিতির গ্রন্থাগারিক তড়িৎ মিশ্রকে ও ভিঙ্গোল যুব সংঘ পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক সরিফুদ্দিন আহমেদকে। তাঁরাও অবসর নেন। তারপর থেকে আমি একাই এই পাঠাগারের দায়িত্বভার সামলে এসেছি। ২০২২সালে ৩০নভেম্বর আমার অবসর হয়। তারপর আর কোনও কর্মী নিয়োগ হয়নি পাঠাগারে। 

    পাঠাগার নিয়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহম্মদ মিজানুর হক বলেন, এখান থেকে দীর্ঘ বছর ভাল পরিষেবা পাওয়া গিয়েছে। তুলসীহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা টিফিন সময়ে পাঠাগারে এসে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে সময় কাটাত। রাত সাতটা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা থাকত। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরাও লাইব্রেরিতে এসে সময় কাটাতেন। শীঘ্রই লাইব্রেরিটি চালু হলে সকলের সুবিধা হবে।  দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র বিমান আলি বলেন, লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে বাড়িতে পড়াশোনা করতাম। লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় বই নিয়ে আর যেতে পারি না। লাইব্রেরিটি চালু হলে পড়ুয়াদের সুবিধা হবে।

    এই ব্যাপারে ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরি অফিসার দেবব্রতকুমার দাস বলেন, মালদহে কর্মী নিয়োগের কোনও বিজ্ঞপ্তি ‌জারি হয়নি। জেলায় গ্রন্থাগারিকের অভাব রয়েছে। একজনকে দু’তিনটি লাইব্রেরি সামলাতে হয়। লাইব্রেরিটি চালু করা যায় কি না, সে বিষয়টি দেখছি।
  • Link to this news (বর্তমান)