আনিসুরের নাম করে হুমকি, দু’দিন ধরে পাঁশকুড়া রেল ইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে সিমেন্টভর্তি রেক, প্রভূত ক্ষতি
বর্তমান | ১১ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: পাঁশকুড়া রেলওয়ে ইয়ার্ডের দখলদারি নিয়ে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দু’দিন ধরে সিমেন্টভর্তি ওয়াগন খালি হচ্ছে না। এই অবস্থায় রেক আনার দায়িত্বে থাকা ওই সংস্থা বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। সময়মতো রেলের ওয়াগন খালি না হলে প্রতি ঘণ্টায় ফাইন দিতে হয়। থানায় এফআইআর দায়ের করেছে ওই সংস্থা। ৮এপ্রিল ভোর ৪টা ৫০মিনিটে ওই রেক পাঁশকুড়া রেল ইয়ার্ডে পৌঁছয়। নিয়ম অনুযায়ী ছ’-সাত ঘণ্টার মধ্যে ওয়াগন খালি করে দেওয়ার কথা। কিন্তু, খুনের মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিনে থাকা আনিসুর রহমানের নাম দিয়ে তাঁরই ঘনিষ্ঠ সন্দীপ ভাণ্ডারী কাজ করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। এই মুহূর্তে ওয়াগন খালি করার দায়িত্বে আছেন আইএনটিটিইউসি নেতা ভীম সেতুয়া। কিন্তু, রেল ইয়ার্ডের দখল নিতে ভীমকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আনিসুর রহমানের নাম ব্যবহার করে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গোটা ঘটনায় পাঁশকুড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পাঁশকুড়া থানার আইসি সমর দে বলেন, সংস্থার পক্ষ থেকে মেল করে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। আমরা তাদের থানায় আসতে বলেছি।
পাঁশকুড়া রেল ইয়ার্ডের দখল কাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এনিয়ে বহুবার ঝামেলা হয়েছে। একসময় সিটুকে তাড়িয়ে ওই ইয়ার্ডের দখল নিয়েছিল আনিসুর রহমান ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা। যদিও পরবর্তীতে পাঁশকুড়া পুর প্রশাসক বোর্ডের ভাইস চেয়ারপার্সন সইদুল ইসলাম খান ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা ওই ইয়ার্ড দেখভাল করতেন। এই মুহূর্তে আইএনটিটিইউসি-র পাঁশকুড়া শহর সভাপতি ভীম সেতুয়া ওই ইয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর অধীনে থাকা শ্রমিকরাই ওয়াগন থেকে মাল নামানো এবং তোলার কাজ করেন। তবে, কুরবান শা খুনে পাঁচ বছর জেলবন্দি আনিসুর রহমান গত ৩জানুয়ারি জামিন পাওয়ার পরই তাঁর ঘনিষ্ঠরা সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন। তাঁরা আবারও পাঁশকুড়া রেলওয়ে ইয়ার্ড দখল নিতে মরিয়া। গত ৮এপ্রিল সিমেন্টভর্তি ২১টি ওয়াগন বিশিষ্ট দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একটি মালগাড়ি পাঁশকুড়ায় এসে পৌঁছয়। সেই ওয়াগন খালি করতে গিয়েই ঝামেলা শুরু হয়। আনিসুর ঘনিষ্ঠ সন্দীপ বাধা দেয় বলে অভিযোগ। আনিসুরের নাম ব্যবহার করে অনেক টাকা চাওয়া হয়। অন্যথায় তাদের লোকজনকে দিয়ে আনলোডিংয়ের কাজ করানোর শর্ত চাপানো হয়। এই অবস্থায় জটিলতা তৈরি হতেই ওই সংস্থার পক্ষ থেকে দুই কর্মীকে পাঁশকুড়ায় পাঠানো হয়। তাঁদের লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সংস্থার পক্ষ থেকে মহাবীরপ্রসাদ শাহ এনিয়ে পাঁশকুড়া থানায় এফআইআর করেছেন। ওই ঘটনায় আনিসুর এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সন্দীপকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আনিসুর জামিন পেলেও কোর্টের নির্দেশে পূর্ব মেদিনীপুরে ঢুকতে পারছেন না। যদিও তাঁর নাম ভাঙিয়ে ঘনিষ্ঠরা দাদাগিরি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
এনিয়ে আইএনটিটিইউসির শহর সভাপতি ভীম সেতুয়া বলেন, ওয়াগন খালি নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। আমরা সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
আনিসুর রহমান ঘনিষ্ঠ সন্দীপ ভাণ্ডারী বলেন, ওই সংস্থার পক্ষ থেকে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। এর আগেও ওরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছিল। আমরা আনলোডিংয়ের কাজে কোনও বাধা দিইনি। টাকা চাওয়ার অভিযোগও মিথ্যা। এনিয়ে আনিসুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।