নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: মাস পাঁচেক পর বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগ এলাকা ‘হাতিশূন্য’ হল। বুধবার রাতে প্রায় ৬৫টি হাতি দল বেঁধে বিষ্ণুপুরের দিকে চলে গিয়েছে বলে বনদপ্তর জানিয়েছে। ফলে গ্রীষ্মকালীন সব্জি ও বোরো চাষে এবার হাতির পাল ‘পাকা ধানে মই’ দেবে না বলে চাষিরা আশা করছেন। হাতির দল চলে যাওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন বনদপ্তরের কর্মী-আধিারিকরাও। কারণ লোকালয় ও চাষের খেতে হামলা আটকাতে বনদপ্তরের তরফে এবার হাতিগুলিকে বড়জোড়ার জঙ্গলে আটকে রাখা হয়েছিল। হাতির উদর পূর্তির জন্য বনদপ্তর দৈনিক কুইন্টাল কুইন্টাল শাক-সব্জি বনবিভাগের আধিকারিকদের জোগাড় করতে হতো। এবার থেকে তাঁদের সেই ঝক্কি পোহাতে হবে না। হাতির দল বিষ্ণুপুর হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে চলে যাবে বলে বনদপ্তর অনুমান করছে। সেক্ষেত্রে গোটা বাঁকুড়া জেলা হাতিশূন্য হয়ে যাবে বলে বনকর্তারা জানাচ্ছেন।
বাঁকুড়া উত্তরের ডিএফও দেবাশিস মহিমাপ্রসাদ প্রধান বলেন, দল ও রেসিডেন্সিয়াল মিলিয়ে ৬৫টি হাতি আমাদের বিভাগের বড়জোড়া, বেলিয়াতোড় রেঞ্জ এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছিল। সেগুলি পাঞ্চেত ডিভিশনের জঙ্গলে চলে গিয়েছে। বর্তমানে আমাদের বিভাগে কোনও হাতি নেই। ফলে ফসল ও সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা আর রইল না।
উল্লেখ্য, বাঁকুড়ায় দীর্ঘদিন ধরেই হাতির আনাগোনা রয়েছে। হাতির দৌরাত্ম্যে বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। চাষিরা ফসল ফলিয়েও গোলায় তুলতে পারেন না। শেষ মুহূর্তে খেত-খামারে হাতির পাল ফসল নষ্ট করে দেয়। মাঠে হাতি পায়ে মাড়িয়ে ধান, সব্জি নষ্ট করে দেয়। কোনও কারণে তা ঘরে আনলেও দেওয়াল বা পাঁচিল ভেঙে হাতি ধান ‘লুট’ করে খেয়ে নেয়। এই পরিস্থিতিতে হাতি তাড়ানোর জন্য বারবার স্থানীয়রা বনদপ্তরের কাছে আবেদন জানান। কিন্তু, তাঁদের কথায় কেউ কর্ণপাত করে না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে জেলার জনপ্রতিনিধিদের একাংশ বনমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। তাঁরা সমস্যার কথা মন্ত্রীকে জানান। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে স্থানীয়দের দাবি। এবার অবশ্য চাষিদের কারও কাছে তদ্বির করতে হয়নি। হাতির পাল ‘স্বেচ্ছায়’ পশ্চিম মেদিনীপুরের রাস্তা ধরেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রামকৃষ্ণ মণ্ডল, অরূপ মালাকার বলেন, কিছুদিন আগে হাতির দল লোকালয়ে হানা দিয়েছিল। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। বোরো ধান পাকার আগে হাতির দল এলাকা ছেড়ে যাওয়ায় চাষিরা স্বস্তি পেয়েছে।
বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, হাতির পাল খাবারের জন্যই যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায়। সাময়িকভাবে হুলাপার্টির সাহায্যে হাতি তাড়ানো সম্ভব। কিন্তু হাতি কোন এলাকায় যাবে বা থাকবে, সেটা তাদের মুডের উপর নির্ভর করে। তাছাড়া রেসিডেন্সিয়াল হাতিকে আমরা তাড়িয়ে দিতে পারি না। সেই চেষ্টা করলে আশপাশের বনবিভাগের আধিকারিকরাও আমাদের দোষারোপ করতে থাকেন। সীমানা এলাকা থেকে ফের হাতিগুলিকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এবার কী হয় সেটাই এখন দেখার।