• ছাগল পালন করে সংসার চলে বধূকে ৩২ লক্ষ টাকা ঋণ পরিশোধের নোটিস
    বর্তমান | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: ছাগল পালন করে সংসার চালান। ব্যাঙ্ক থেকে ৩২ লক্ষ টাকা লোন পরিশোধের নোটিস পেয়ে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় কোতুলপুরের কোয়ালপাড়ার গৃহবধূ জরিনা বেগমের। তাঁর অভিযোগ, ভুল বুঝিয়ে নথি নিয়ে এক আত্মীয় তাঁকে ফাঁসিয়েছে। ঘটনা জানতে পেরেই তিনি ওই আত্মীয়ের বিরুদ্ধে কোতুলপুর থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিস জানিয়েছে, অভিযোগ হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

    জরিনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার নিজের আত্মীয় হয়ে এভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে দেবে, তা বুঝতে পারিনি। আমি লেখাপড়া জানি না। কোনওরকমে নামসই টুকু করতে পারি। আমাকে ভুল বুঝিয়ে নথিপত্রে সই করিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু, সে যে আমার নামে এত টাকা লোন নিয়েছে, তা আমি ঘুণাক্ষরে টের পাইনি। নোটিস পাওয়ার পর ব্যাঙ্কে গিয়ে জানতে পারি ২০১৭সালে আমার নামে ২০লক্ষ টাকা লোন নেওয়া হয়েছে। তা সুদে-আসলে বর্তমানে ৩২লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আমি দু’টো গোরু ছাগল পালন করে খাই। কী করে তা পরিশোধ করব? এনিয়ে ওই আত্মীয়কে বলতে গেলে সে এখন লোন পরিশোধ করতে অস্বীকার করছে। তাই পুলিসের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। 

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে জরিনা বেগমের নামে কোতুলপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ভাঙাচোরা জিনিসপত্রের ব্যবসার উন্নতির জন্য ২০লক্ষ টাকা লোন নেওয়া হয়। দু’-একটি কিস্তি জমা দেওয়ার পর আর দেওয়া হয়নি। বর্তমানে সুদে আসলে তা ৩২লক্ষ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ, জরিনা বেগমের নাম করে লোনের টাকা হাতিয়েছে তারই এক আত্মীয়। দীর্ঘদিন লোন পরিশোধ না করায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জরিনা বেগমের নামে বকেয়া ঋণের টাকা পরিশোধের নোটিস পাঠিয়েছে। তাতেই বিপাকে পড়েছে ওই বধূর পরিবার। এরপরে ওই আত্মীয়কে ঋণ পরিশোধের কথা বললে সে অগ্রাহ্য করে। প্রতিবাদ করলে জরিনা বেগমের স্বামী ও ছেলেদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাই তিনি কোতুলপুর থানায় মারধর ও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন।

    জরিনা বেগমের স্বামী শেখ সইদুল বলেন, আত্মীয় হওয়ার সুবাদে আমার স্ত্রী বিশ্বাস করে তাকে নথিপত্র দিয়েছিল। কিন্তু, স্ত্রীর নামে এত টাকা লোন নেওয়া হয়েছে সেটা কোনওদিন জানতে দেওয়া হয়নি। ব্যাঙ্ক থেকেও এব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এতদিন বাদে ৩২লক্ষ টাকা বকেয়ার নোটিস পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে আত্মীয়কে লোন পরিশোধের কথা বলতে গেলে সে অস্বীকার করছে। এমনকী প্রতিবাদ করায় আমাদের মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের কাছেও আমার প্রশ্ন, একজন সাধারণ গৃহবধূর নামে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কোনও রকম বন্ধকি ছাড়াই এত টাকা লোন দিল কী করে?
  • Link to this news (বর্তমান)