• ‘যোগ্যদের চাকরি ফিরিয়ে দিন’ প্ল্যাকার্ড ধরাল ডিআইয়ের হাতে!
    বর্তমান | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: পূর্ব মেদিনীপুরের ডিআই এবং এডিআইয়ের হাতে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড সমেত ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। চাকরিহারা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এই ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে তাঁদের কারও কারও সংযোজন, ‘অন্য জেলাতেও ডিআই এবং এডিআই এভাবেই চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে থাকুন। পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। অন্যায় রুখে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ যদিও আসল ঘটনা অন্যরকম। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা বুধবার সকালে তমলুক শহরে মানিকতলায় ডিআই অফিসে হাজির হন। ওই অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পলাশ রায় এবং অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক মুকুল গায়েন সহ কর্মীরা অফিসের বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময় আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিক্ষোভ দেখানোর পর ওই দু’জনকে একপ্রকার জোর করে মানিকতলা মোড়ে নিয়ে যান। তারপর সেখানে অবরোধ শুরু হয়।

    মানিকতলা মোড়ে অবরোধ চলাকালীন ডিআই এবং এডিআই঩য়ের হাতে দু’টি প্ল্যাকার্ড ধরানো হয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাপে দু’জনে প্ল্যাকার্ড হাতে ধরেন। তার একটিতে লেখা, ‘যোগ্যদের চাকরি ফিরিয়ে দিন।’ আরেকটিতে লেখা, ‘যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।’  সন্ধ্যার পর থেকেই ডিআই এবং এডিআইয়ের হাতে থাকা ওই প্ল্যাকার্ড সহ তাঁদের ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকরা পলাশবাবুকে ফোন করে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। সত্যিই কি তাঁরা এভাবে প্ল্যাকার্ড ধরে আন্দোলনরত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, নাকি গোটাটাই এআই দ্বারা তৈরি তা জানতে মুহুর্মুহু ফোন আসে। এই ঘটনা এতটা বাড়াবাড়ি হবে সেটা ভাবতেও পারেননি পূর্ব মেদিনীপুরের ডিআ‌ই।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা পূর্ব মেদিনীপুরের ডিআই এবং এডিআইয়ের ওই ছবি ভাইরাল করেছেন। এই জেলায় শিক্ষাদপ্তরের ও‌ই দুই অফিসার তাঁদের আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন করেছেন বলে আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি। এই জেলায় প্রায় ১৫০০ শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়েছে। গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডির সংখ্যাটা আরও ৬০০। মোট ২১০০ জন চাকরি খুইয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে যোগ্যরা চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় আন্দোলনে নেমেছেন। আন্দোলনকারীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করায় বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বুধবার হলদিয়া-কোলাঘাট জাতীয় সড়কে নিমতৌড়িতে জাতীয় সড়কের উপর টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ হয়। রাস্তার দু’দিকে তখন গ্যাসের ট্যাঙ্কার দাঁড়িয়ে। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে?

    চাকরি খোয়ানো শিক্ষিকা শতাব্দী মান্না বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে এই চাকরিটা পেয়েছি। তারপর আদালতের রায়ে সেই চাকরি বাতিল হয়ে গেল। এখন আমরা লজ্জায় স্কুলে যেতে পারছি না। চাকরি পেতে পরীক্ষার জন্য রাতের পর রাত জেগেছি। এখন চাকরি বাঁচানোর জন্য রাতের পর কেটে যাচ্ছে। কেন যোগ্য এবং অযোগ্য নিয়ে সমাধান করা হল না। 

    এনিয়ে পলাশবাবু বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবির প্রতি আমি সহমর্মী। তবে, অফিস থেকে মানিকতলা মোড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। তারপর হাতে প্ল্যাকার্ড ধরিয়ে ছবি তোলা হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)