• বাড়ছে হার্ট, ব্রেন অ্যাটাক তিনমাসে ভর্তি ৫০০
    বর্তমান | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: আচমকা শরীর খারাপ। শরীর যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টি কমছে অনেকটাই। সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্বলতা। বেশিভাগ ক্ষেত্রেই গ্যাসের ওষুধ খেয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছে মানুষ। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় যখন তাঁরা হাসপাতালে যাচ্ছেন, তখন আর চিকিৎসকদের করার কিছু থাকছে না। হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন অ্যাটাকে মৃত্যু হচ্ছে সাধারণ মানুষের। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এই ছবি মাঝে মধ্যেই ফুটে উঠেছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, গত তিন মাসে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শুধু হার্ট ও ব্রেন অ্যাটাক নিয়ে পাঁচশো রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫০ জনেরও কম রোগী সঠিক সময়ে হাসপাতালে এসেছেন। ফলে রোগীদের সুস্থ করে তুলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ডাক্তারদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, হার্ট অ্যাটাক ও বিভিন্ন ধরনের স্ট্রোকের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। খাদ্যাভ্যাসের জন্যও এমন ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিপদ ঘটে যাওয়ার পরেও অনেকে হাসপাতালে আসতে দেরি করছেন। এর ফলে সেরে ওঠার সম্ভবনা কমছে। জীবনদায়ী ওষুধ ব্যবহার করেও বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।

    জেলার সিএমওএইচ সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, জেলায় অনেকেরই হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্টোক হচ্ছে। বিভিন্ন উপসর্গ দেখা গেলেই সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছি। দ্রুত হাসপাতালে গেলেই সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব। এই ধরনের রোগের মোকাবিলায় জেলায় টেলি মেডিসিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মানুষকে আরও সতর্ক হতে হবে।

     প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে। আগে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সঙ্গে বয়সের সম্পর্ক থাকলেও, বর্তমানে তা একেবারেই নেই। কারণ, একেবারে অল্পবয়সিদের মধ্যেও এই রোগ দেখা যাচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হিসেবে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত অ্যালকোহল, সিগারেট খাওয়া, মানসিক চাপ, ভুল খাদ্যাভ্যাস, ভেজাল খাবার অন্যতম। চিকিৎসকদের মতে, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রাথমিক বেশকিছু লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। সেই লক্ষণগুলোকে একসঙ্গে বলা হচ্ছে ‘বি ফাস্ট’ (BE FAST)। ‘বি’ অক্ষরকে ব্যালেন্স হিসেবে বোঝানো হচ্ছে। আচমকা শরীরের ব্যালান্স হারানো এই রোগের উপসর্গ হতে পারে। এরপর ‘ই’ অক্ষরকে আই বা চোখ বোঝানো হচ্ছে। স্ট্রোক হলে অনেক সময় চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়া বা চারিপাশ অন্ধকার হওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ‘এফ’ অক্ষরকে ফেস বা মুখ হিসেবে বোঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ মুখ বেঁকে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ‘এ’ অক্ষরটি আর্ম বা হাত, পা। এক্ষেত্রে অনেক সময় হাত-পা অসাড় হওয়ার উপসর্গ দেখা যায়। ‘এস’ অক্ষরটি স্পিচ হিসেবে বোঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ কথা বলায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। ‘টি’ অক্ষরকে টাইম বোঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। যেটাকে বলা হয় গোল্ডেন আওয়ার।

    চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হলে তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া খুবই জরুরি। সেই সময়ের মধ্যে নিয়ে গেলেই টেনেক্টেপ্লেস ইনজেকশন ব্যবহার করার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এই ইনজেকশনের দাম অস্বাভাবিক বেশি। কিন্তু মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলো থেকে এই ইনজেকশন বিনামূল্যে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে অনেকের ইসকিমিয়া (ব্লকেজ) উপসর্গ থাকছে। সেক্ষেত্রে সময় মতো চিকিৎসা শুরু করলে রক্ত জমাট হয়ে আর থাকছে না। মেদিনীপুর শহরের চিকিৎসক রাজীব দে বলেন, ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা বাড়ছে। শরীর চর্চা বাড়াতে হবে। সুস্থ জীবন যাপন করলে সমস্যা হবে না।
  • Link to this news (বর্তমান)