• অন্নপ্রাশনের আংটি চুরি, নাম খোদাই করা সেই গয়নাই উদ্ধার করল পুলিস
    বর্তমান | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ৩৯ বছর ৬ মাস। অন্নপ্রাশন থেকেই যকের ধনের মতো আংটিটি আগলে রেখেছিলেন তিনি। সামান্য অসতর্কতা এবং গৃহ পরিচারিকার হাতযশে খোয়া গিয়েছিল সেটি। শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন— আট গ্রামের সোনার আংটিটি তাঁর নয়নের মণি ছিল। কারণ ওই আংটিতে খোদাই করা ছিল ‘সমীরণ’ নামটি। ভালোবেসে কাকু এই নামেই ডাকতেন ছোটবেলা থেকে। সেই অতিপ্রিয় আংটি খোয়া যাওয়ার পর থেকেই মুখ গোমড়া সমীরণ মুখোপাধ্যায়ের। তিনি ছুটেছেন পুলিসের কাছে। তবে একদিনের মধ্যেই হাসি ফিরল তাঁর মুখে। 

    পর্ণশ্রীর ইউনিক পার্কের বাসিন্দা সমীরণবাবু। ঘরের আলমারিতে একটি সুন্দর লাল রঙের বাক্সে থাকত তাঁর অন্নপ্রাশনে উপহার পাওয়া আংটিটি। কাকুর কথা মনে পড়লে সেটি বের করে দেখতেন গৃহকর্তা। হঠাৎ একদিন তিনি আবিষ্কার করেন, লাল বাক্সটি রয়েছে। কিন্তু, তাতে আংটি নেই। খোঁজ খোঁজ। বাড়িশুদ্ধ মানুষের মাথা খারাপ হয়ে গেলেও আংটি কিছুতেই মেলেনি। এরপর পর্ণশ্রী থানায় অভিযোগ। পুলিসের তদন্ত শুরু। অভিযোগপত্রে সন্দেহভাজন হিসেবে গৃহ পরিচারিকার কথা উল্লেখ করেছিলেন সমীরণবাবুর স্ত্রী সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়। তিনি পেশায় বিজ্ঞানী। সঞ্চিতা পুলিসকে জানান, আট মাস আগে গৃহ পরিচারিকা পূর্ণিমা মণ্ডল কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছে। তাঁর ঠিকানা জানা নেই। সূত্র বলতে রয়েছে শুধুমাত্র মোবাইল নম্বর। সেই সূত্র ধরেই পূর্ণিমার লোকেশন ট্র্যাক করে পর্ণশ্রী থানার পুলিস। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে তার বাড়ি। মহিলা সাব ইনসপেক্টরের নেতৃত্বে সেখানে হানা দেয় থানার টিম। অভিযুক্ত পূর্ণিমার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ‘সমীরণ’ খোদাই করা সেই আংটি। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৭০ হাজার টাকা। 

    এখানেই শেষ নয়, কেঁচো খুঁড়তে উদ্ধার হয় কেউটে। থানায় এনে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদে ওই পরিচারিকা স্বীকার করে, শুধু আংটি নয়, সে হাতিয়েছে বিজ্ঞানীর দু’জোড়া সোনার কানের দুলও। বাড়ি থেকে সেই দু’টি সোনার দুলও উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। পুলিস জানিয়েছে, ওই দুলের দাম প্রায় দু’ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে সুযোগ বুঝে আড়াই লক্ষের বেশি টাকার অলঙ্কার হাতিয়ে নেয় পূর্ণিমা। তাকে গ্রেপ্তার করে পর্ণশ্রী থানার পুলিস। তাকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। অভিযোগকারিণী তথা বিজ্ঞানী সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, স্বামীর আংটির সঙ্গে পারিবারিক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। প্রয়োজন পড়ত না বলে, সেই বাক্স খোলা হতো না। সেটি যে খোয়া গিয়েছে, তা বুঝতেই প্রায় আট মাস সময় লেগে যায়। এত দেরিতে অভিযোগ করা হলেও পুলিস তা দ্রুত উদ্ধার করে দিয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)