• বিক্ষোভ-মিছিলে লণ্ডভণ্ড শহর
    বর্তমান | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সায়েন্স সিটির দিক থেকে মা ফ্লাইওভার ধরেছিলেন আইটি কর্মী সুজয় দাস। দেড় ঘণ্টা কেটে গেলেও এক্সাইড মোড়ে পৌঁছতে পারেননি তিনি! এত জ্যাম কীসের? কিছুই জানতেন না। অগত্যা বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখলেন, ‘কেউ কিছু জানিস?’ সঙ্গে সঙ্গে একজন লিখল ‘ওয়াকফ’। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরেক বন্ধু ‘পোস্ট’ করল নিউটাউনের বহুতল থেকে তোলা ভিডিও। একের পর এক ম্যাটাডর, বাস চেপে দলে দলে মানুষ চলেছে কলকাতা অভিমুখে। কলকাতা পুলিসের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার শহরে সব মিলিয়ে ১০টি মিছিল-জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বেশিরভাগ কর্মসূচিই ছিল শিয়ালদহ-ধর্মতলা চত্বরে। এতগুলি মিছিল-জমায়েতের কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় শহর। ধর্মতলা, শিয়ালদহ সংলগ্ন রাস্তাগুলিতে তীব্র যানজটের রেশ ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিস্তীর্ণ অংশে। চড়া রোদ আর তীব্র গরমে জেরবার হতে হয় সবাইকে। 

    সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে এদিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ কলকাতায় আসেন। দুপুরের দিকে মৌলালি, সিআইটি রোড, এন্টালি, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, এম জি রোড স্তব্ধ হয়ে যায়। একেবারে স্কুল ছুটির সময় এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় পড়ুয়াদের নিয়ে ঘরে ফিরতে বিপাকে পড়েন অভিভাবকরা। মিন্টো পার্ক, শরত্ বোস রোড, এক্সাইড মোড় বা হাওড়া ব্রিজ—সর্বত্র ভালোরকম প্রভাব পড়ে। এই অবস্থায় স্বভাবতই ভিড় বাড়তে থাকে মেট্রোতে। অনেকে বাসে টানা বসে থেকে তিতিবিরক্ত হয়ে নিকটস্থ মেট্রো স্টেশনে ঢুকে পড়েন। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ট্যাক্সি চালকরা বাড়তি ভাড়া হেঁকেছেন। ডাক্তার দেখিয়ে সাঁকরাইলে ফিরছিলেন সফিউল আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। লটবহর নিয়ে ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছিলেন। সাঁকরাইল যেতে কোনও ট্যাক্সি চাইল হাজার টাকা, কোনওটা আরও বেশি। শেষ পর্যন্ত হাওড়া স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরেই বাড়ি ফিরবেন বলে ঠিক করলেন তাঁরা। এজেসি বোস রোড, মিন্টো পার্ক চত্বরে একাধিক নামজাদা স্কুল। ছুটির পর ঘেমেনেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হল পড়ুয়া ও অভিভাবকদের। বাস পাওয়া তো দূরের কথা, অ্যাপ ক্যাবও পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করলেন এক অভিভাবক। আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘হাঁটার মতো জায়গাও নেই। কোন রাস্তা খোলা রয়েছে, বুঝতেই পারছি না। এদিক-ওদিক হেঁটে এখন ওয়েলিংটনে এসেছি। কোথাও গাড়ি নড়ছে না।’ তাঁদের অভিযোগ, মৌলালি থেকে এসপ্ল্যানেড মেট্রো পর্যন্ত খুদে পড়ুয়াদের হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে দেখা যায় অনেক মা-বাবাকে। ছোট ছোট মুখগুলো ততক্ষণে রোদের আঁচে লাল হয়ে উঠেছে। 

    ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে ধর্মতলায় জমায়েতের পাশাপাশি এদিন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মচারীরা শিয়ালদহ থেকে রানি রাসমনি রোড পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন । সেই কারণেও যানজট তীব্র হয় এজেসি বোস রোড, এপিসি রোড, মহাত্মা গান্ধী রোড সহ শিয়ালদহের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বিভিন্ন রাস্তায়। এছাড়া, বিকেলের দিকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বামেদের  বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে যান চলাচল ব্যাহত হয়। অনেক বাধা অতিক্রম করে অফিসে ঢোকার পর অনেকে ভেবেছিলেন, মিছিল-টিছিল  মিটে গিয়েছে। শান্তিতে অম্তত ফেরা যাবে! কিন্তু কোথায় কী! বিকেলে রাসবিহারী মোড় থেকে গড়িয়াহাট পর্যন্ত বামফ্রন্টের মিছিলে দক্ষিণ কলকাতার রাস্তাঘাট লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। আরেক দফা দুর্ভোগ সইতে সইতেই ঘরে ফিরতে বাধ্য হন অসংখ্য মানুষ। 
  • Link to this news (বর্তমান)