• মুম্বইয়ে ১৬টি শিশুপাচার কাণ্ডে উত্তরপাড়ায় ধৃত মহিলা ‘ডাক্তার’
    বর্তমান | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মুম্বইয়ের শিশু অপহৃত হয়ে চলে এসেছিল কলকাতায়। উদ্দেশ্য অন্যত্র পাচার করা। নিঃসন্তান দম্পতির কাছে হাতবদলের আগেই পাচার চক্রের মূল অভিযুক্তকে হুগলির উত্তরপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল মহারাষ্ট্রের ওয়াডালা ট্রাক টার্মিনাল থানা। নিজেকে ‘ডাক্তার’ বলে পরিচয় দেওয়া অভিযুক্ত মৌমিতা দত্ত ওরফে মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে সন্তোষীর বাড়ি থেকে দুটি শিশু উদ্ধার হয়েছে। অভিযুক্ত মহিলা দীর্ঘদিন ধরে শিশু পাচার ও কেনাবেচায় জড়িত বলে জানা যাচ্ছে। 

    মুম্বই পুলিস সূত্রে খবর, ২০২৪ এপ্রিল মাসে ওয়াডালা ট্রাক টার্মিনাল স্টেশন থানায় দুটি শিশু বিক্রির অভিযোগ জমা পড়ে। তার তদন্ত নেমে অফিসাররা দেখেন, এর পিছনে বড়সড় পাচার চক্রের হাত রয়েছে। যারা বিভিন্ন নার্সিংহোম, হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাত শিশু কিনছে। সেগুলি পাচার হচ্ছে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে। এমনকী তেলেঙ্গানা ও কর্ণাটকেও পাচার করা হচ্ছে। তদন্তে উঠে আসে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পেজ খুলে বাচ্চা বিক্রির কারবার চালানো হচ্ছে। এরপরই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে প্রথমে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ওয়াডালা ট্রাক টার্মিনাল থানার পুলিস। পরে আরও কয়েকজন ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে ছিল এক ডাক্তার। 

    এখান থেকেই তদন্ত নতুন দিকে মোড় নেয়। জানা যায় রীতিমতো চক্র গড়ে এই কারবার চালানো হচ্ছে। তাতে রয়েছেন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও বিভিন্ন আইভিএফ সেন্টার। বিভিন্ন নার্সিংহোমে অবৈধভাবে প্রসব হওয়া শিশুদের পাচার চক্রের হাতে দিচ্ছে সেখানকার চিকিৎসকদের একাংশ। একাধিক হাত ঘুরে নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে শিশুদের বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে চক্রের এজেন্টরা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে মহিলা জোগাড় করছেন। তাঁদের বিভিন্ন আইভিএফ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিম্বাণু বিক্রয়ের জন্য। শুক্রাণু ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে বিভিন্ন মহিলার গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পর চক্রে জড়িত চিকিৎকদের নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে প্রসব করানো হচ্ছে। এক একটি শিশু বিক্রি হচ্ছে আশি হাজার থেকে আট লক্ষ টাকায়। তদন্তকারীরা এখনও পর্যন্ত ১৬টি শিশু পাচারের খোঁজ পেয়েছেন। যার মধ্যে পাঁচটি মেয়ে ও ১১টি ছেলে বলে জানা যাচ্ছে। তাদের মুম্বই ছাড়াও অন্য রাজ্যে বিক্রি করা হয়েছে। এই সমস্ত শিশুদের বার্থ সার্টিফেকেট তৈরি করা হচ্ছে মুম্বইয়ের  বিভিন্ন হাসপাতালে।

    তদন্তে উঠে আসে এই চক্রে এক মহিলা রয়েছে। যে নিজেকে  ডাক্তার বলে পরিচয় দিচ্ছে। তার কাছে দুটি শিশু রয়েছে। যাদের একটির বয়স পাঁচ, অন্যটির দুই।  ওড়িশায় একটি হাসপাতালে সে কাজও করছে।  তার কলকাতায় আত্মীয় রয়েছে। ধৃতদের মোবাইলের সূত্র ধরে ওই ডাক্তারের নম্বর পান তদন্তকারীরা। টাওয়ার লোকেশন ধরে জানা যায়, অভিযুক্ত ওই মহিলা হুগলির উত্তরপাড়ায় রয়েছে। এরপর ওয়াডালা ট্রাক টার্মিনাল থানার চার অফিসার রাজ্যে পৌঁছন। স্থানীয় থানাকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরপাড়ার জ্ঞানেন্দ্র অ্যাভিনিউ থেকে মৌমিতাকে বুধবার গ্রেপ্তার করে স্থানীয় আদালতে তোলে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে দুটি শিশু। ট্রানজিট রিমান্ডে তাকে মুম্বই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)