• মমতাকে আদালত অবমাননার নোটিস দিল্লির আইনজীবীর
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • চাকরি বাতিল মামলায় সুপ্রিম রায়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে আদালত অবমাননার নোটিস পাঠালেন এক আইনজীবী। দিল্লির ওই আইনজীবীর নাম সিদ্ধার্থ দত্ত। তিনি বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই নোটিস পাঠিয়েছেন। নোটিসে সিদ্ধার্থ বলেছেন, দেশের শীর্ষ আদালতের রায় সকলকেই মানতে হবে। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এই রায় কার্যকর করতে চাইছেন না। এমনটাই দাবি করেছেন ওই আইনজীবী। এরপরই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যদি নিজের মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা না চান, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে।

    প্রসঙ্গত ২০১৬ সালের এসএসসি-র সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যার জেরে রাজ্যজুড়ে চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। এই পরিস্থিতিতে চাকরিহারাদের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে, মুখ্যমন্ত্রী কিছু একটা করুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে গত ৭ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের সভায় উপস্থিত হয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ান। সেখানে তিনি সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন,‘বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি বিচারপতিদের সম্মান করি।’ এরপরই তিনি বলেন, ‘আমি এই রায় মানতে পারছি না।’

    এদিকে রাজ্যের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করা হবে না বলে আইনজীবী যে দাবি করেছেন, প্রশাসনের তরফে সে রকম কোনও ইঙ্গিত কখনও দেওয়া হয়নি। রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থও সরকারের ধারনা স্পষ্ট করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি রাজ্য সরকারের তরফে বার বার আইনি পথে এগোনোরই বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন। মুখ্য সচিব জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের তরফে বার বার আইনি পথে এগোনোরই বার্তা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সে কথা বলেছেন। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে স্থিতাবস্থা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সরকারও সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যসচিব।

    কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নেতাজি ইন্ডোরের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার গন্ধ পাচ্ছেন আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্ত। এজন্য তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবার জন্য নোটিস পাঠিয়েছেন। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, না হলে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো সেই নোটিসে ৭ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোরে মমতার বক্তব্যের সংশ্লিষ্ট অংশ তুলে ধরা হয়েছে। নোটিসে লেখা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী গত ৭ এপ্রিলের ভাষণে বলেছেন, ‘কারও চাকরি কাড়ার এই অধিকার কারও নেই। আমাদের প্ল্যান— এ রেডি, বি রেডি, সি রেডি, ডি রেডি আর ই রেডি। এই কথা বলার জন্য আমাকে জেলে, হ্যাঁ, ভরে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু আই ডোন্ট কেয়ার। আপনারা আপনাদের কাজ করুন। কে আপনাদের আটকাচ্ছে? সুপ্রিম কোর্ট? সে ক্ষেত্রে মনে রাখবেন যা-ই বিকল্প হোক, আমরা করব।’

    নোটিসে আরও উল্লেখ হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি ইন্ডোরের সভায় বলেছেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার জন্য… একটা চক্রান্ত চলছে… একটা পরিকল্পনা চলছে। ৯, ১০, ১১, ১২-তে যাঁরা শিক্ষক, গেটওয়ে অফ হায়ার এডুকেশন তৈরি করছেন, তাঁরা অন্যদের খাতা দেখছেন, তাঁদের মধ্যে গোল্ড মেডেলিস্ট আছেন। তাঁদের জীবনেও ভাল রেজ়াল্ট ছিল। তাঁদের সবাইকে চোর বলে দিচ্ছেন। সবাইকে অযোগ্য বলে দিচ্ছেন। এই বলার অধিকার আপনাকে কে দিল? আমি সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছি।’

    এদিকে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা সিদ্ধার্থের এই নোটিস নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি অভিযোগ করেছেন, চাকরিহারাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার গতি মন্থর করতেই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই আইনি নোটিস দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি এক্স হ্যান্ডেলে পাল্টা পোস্ট করে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যাঁরা চাকরিহারা, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের চাকরি কী ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, মুখ্যমন্ত্রী সেই চেষ্টা করছেন।

    কুণাল বলেছেন, ‘জটিলতা তৈরি করে প্রক্রিয়ার গতি কমানোর চক্রান্ত। চাকরিহারারা কী চান? মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টা সফল হোক। আপনাদের চাকরি বাঁচুক। না কি এ সব আইনি জট পাকানোর চক্রান্তকারীরা জটিলতা বাড়াক? অবস্থান নিন আপনারা।’

    বিষয়টি নিয়ে কুণাল রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘রাম-বাম ভোটে পারে না, কোর্টে জট পাকায়। মুখ্যমন্ত্রী বিচারব্যবস্থায় সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন। বিচারপতিদের সম্মান দেন। কিন্তু কোনও রায়ে ন্যায়বিচার না হলে বা বহু মানুষের ক্ষতি হলে, সেই অংশ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে পুনর্বিবেচনার কথা বলেন। এর সঙ্গে আদালত অবমাননার কোনও সম্পর্ক নেই। মনে রাখবেন, বিচারপতির চাকরি ছেড়ে বিজেপির সাংসদ হতে গেলেও সাধারণ মানুষের চোখে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)