এই সময়: সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আটদিন পরেও ২৬ হাজার চাকরিহারার বেতন নিয়ে সংশয় কাটল না। স্যালারি রিক্যুইজিশন পোর্টালে চাকরি হারানো রাজ্যের ২৫ হাজার ৭৫২ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নাম থাকলেও তাঁদের আদৌ বেতন দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রের খবর, চাকরিহারাদের চলতি মাসের বেতন দিলে আদালত অবমাননার মুখে পড়ার আশঙ্কা থেকেই লিগাল সেলের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বৃহস্পতিবার বিকেলে এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গত মাসের মাইনে এ বার ১ তারিখ হয়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরিয়েছে ৩ তারিখ। পর্ষদ ইতিমধ্যে রায়ের ক্লারিফিকেশন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। এসএসসি–ও সামনের সপ্তাহে রিভিউ পিটিশন চেয়ে শীর্ষ আদালতে যাবে। সরকারও সঙ্গে থাকবে। তাছাড়া কেউ মাইনে দেয় না। সকলে মাইনে পায় নিজের যোগ্যতায়। তাই মাইনে না পাওয়ার প্রশ্ন উঠছে কেন?’
শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের ভিত্তিতেই বেতন পাওয়ার আশা জেগে ওঠে চাকরিহারা শিক্ষকদের। যদিও রাতের দিকে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ব্রাত্য বলেন, ‘শিক্ষকরা বেতন পাবেন কি না, তা নিয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’
শিক্ষা দপ্তর সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ প্রকাশ্যে বলেছেন, ওই শিক্ষকদের একজনকেও শিক্ষা দপ্তর বা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে টার্মিনেশন লেটার দেওয়া হয়নি। দেওয়া হবেও না। সকলে চাকরিতে বহাল রয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সরকার তাঁদের টার্মিনেশন লেটার না দিলেও কি বেতন দিতে পারবে? এখানেই ধোঁয়াশা রয়েছে।
ফলে শিক্ষা দপ্তরও বিষয়টি নিয়ে আইনি মতামত নেওয়া শুরু করেছে। এর আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী এই শিক্ষকদের বলেছিলেন, ‘আপনারা ভলান্টারি সার্ভিস দিন। আগামী ২ মাস একটু কষ্ট করুন। ২০ বছর নিশ্চিন্তে থাকার জন্য।’ ফলে প্রশ্ন উঠেছে, চাকরিহারা শিক্ষকরা কি আদৌ এই প্রস্তাব মানবেন? কেউ কি পাকা চাকরির বদলে বেতনহীন ‘সার্ভিস’ দেবেন?
রাজ্যও কি আদৌ এই চাকরি হারা শিক্ষকদের বেতন দিতে পারবে?
রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্রর পর্যবেক্ষণ, ‘কোনও ভাবেই সরকার এই শিক্ষকদের মাইনে দিতে পারবে না। কারণ, গোটা প্যানেলটাই বাতিল করা হয়েছে। এরা আর শিক্ষক নন। যদি এরপরেও সরকার বেতন দেয়, তাহলে তা হবে আদালত অবমাননার সামিল।’
এর বিপক্ষেও অবশ্য যুক্তি রয়েছে। আইনজীবীদের একাংশের দাবি, ‘সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে চলেছে সরকার। সে ক্ষেত্রে গোটা বিষয়টিই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে। তাই আইনত বেতন দিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
এপ্রিল মাস থেকেই সরকারি কর্মীরা চার শতাংশ হারে ডিএ পাবেন। শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদেরও এই আর্থিক সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই চাইছেন পুরোনো মাইনে পেলেও তাঁদের আপত্তি নেই।
শিক্ষকদের বেতন প্রসঙ্গে ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র তরফে চিন্ময় মণ্ডল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা আইন মেনেই বেতন পেতে চাই। সরকার সেই পথ ঠিক করুক। এখন টাকা পেয়ে ভবিষ্যতে কোনও বিপাকে পড়তে চাই না।’
এই পরিস্থিতিতে মঞ্চের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) যোগ্যদের তালিকা দ্রুত প্রকাশ করুক। এমনকী, ২০১৬ সালের নিয়োগ পরীক্ষার ওএমআর–এর মিরর ইমেজও সামনে আনুক। এদিন ব্রাত্য বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে অবশ্যই আইনি পরামর্শ নেব। যদি যোগ্যদের তালিকা স্পষ্ট করে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও আইনি বাধা না থাকে, সে ক্ষেত্রে পরামর্শ মেনেই এসএসসি–র ওয়েবসাইটে সেই তালিকা প্রকাশ করা হবে।’
তাঁর আশ্বাস, ‘চাকরিহারা শিক্ষকদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। তা একশো শতাংশ পূরণ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এই আইনি লড়াইয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে আমরা রয়েছি।’