• স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করলে বেতন মিলবে? প্রশ্ন ক্যান্সার আক্রান্তের
    এই সময় | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • বিশ্বরূপ বিশ্বাস, ইসলামপুর

    খুব ইচ্ছে ছিল, নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যাবেন। শরীরটা খারাপ ছিল। তবু ভেবেছিলেন, কলকাতায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে নিজ কানে শুনে আসবেন এমন কোনও কথা, যা চলতি সঙ্কট কাটাতে পারে। সেই সভায় যেতে পারেননি চাকরিহারা শিক্ষক সুশান্ত দত্ত। গভীর এক অসুখ ঘিরে রেখেছে তাঁকে। সঙ্গে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা।

    ২০১৬ সালে এসএসসি–র মাধ্যমে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার মাঝিয়ালি হাইস্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন সুশান্ত। ইতিহাসের শিক্ষকের জীবন স্বাভাবিক ছন্দে এগোচ্ছিল। এই সহজ–সরল জীবন হঠাৎই বদলে যায়। ২০২২ সালে তাঁর শরীরে ধরা পড়ে ব্লাড ক্যান্সার। এরপর থেকে প্রতিদিন ওরাল কেমোথেরাপির উপরে ভরসা করে চলছে তাঁর জীবনযুদ্ধ। তখন থেকেই বদলে যায় জীবন। চার মাস অন্তর মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে যেতে হয় তাঁকে। মুম্বই গেলে খরচ হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে ওষুধের খরচ ৯ হাজার টাকা। চিকিৎসকদের নিদান, আজীবন এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার চালিয়ে যেতে হবে তাঁকে। কিন্তু এখন তিনি চাকরিহীন। আয়ের পথ বন্ধ। সামনে ১৯ মে আবার যাওয়ার কথা মুম্বইয়ে— কিন্তু কোথা থেকে আসবে এত টাকা?

    আমি কি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারব? আমার সন্তানকে আর বড় হতে দেখতে পাব? স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন ছাড়া পথ খুঁজে পাচ্ছি না

    সুশান্ত দত্ত

    চিকিৎসার খরচ থেকে পরিবারের ভরণপোষণ— সবই এখন অনিশ্চিত। ইসলামপুরের দুর্গানগরে বাড়ি তাঁর। জায়গা কম থাকায় সেখানেই ভাড়াবাড়িতে থাকেন স্ত্রী ও তিন বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে। সুশান্তের একার উপার্জনে সংসার চলে। বলেন, ‘টিভিতে মুখ্যমন্ত্রীর সভা দেখলাম। কিন্তু আমার মতো মানুষের কথা একবারও উঠল না। ভলান্টিয়ারি সার্ভিসের কথা বলা হলো, কিন্তু আমি কী ভাবে সেটা দেবো? প্রতিদিন কেমোথেরাপির ওষুধ খাই। শরীরে শক্তি নেই।’

    স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করলে বেতন মিলবে কি, এই চিন্তায় চোখের পাতা এক করতে পারছেন না তিনি। একটা প্রশ্নই কুরে কুরে খাচ্ছে সুশান্তকে— ‘চিকিৎসা চালাব কী ভাবে? পরিবারের কী হবে? কে দেখবে ওদের?’

    প্রতিবেশীদের সহানুভূতিতে সঙ্কট কাটার নয় সুশান্তের। তাঁর আকুতি, ‘আমার প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই কারও কাছে। প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিতে আসছেন। কিন্তু কেউই জানেন না, কী ভাবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে।’

    সুশান্তের জন্য বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?

    এই প্রশ্নের জবাব পেতে স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশনের দিকে তাকিয়ে সকলে, সুশান্তও। মনোবল তলানিতে ঠেকেছে। বলছেন, ‘আমি কি আমার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারব? সন্তানকে আর বড় হতে দেখতে পাব? স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন ছাড়া আর কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছি না।’

  • Link to this news (এই সময়)