• মেয়ের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় চাকরিহারা শিক্ষক দম্পতি
    এই সময় | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • সুশান্ত বণিক, বারাবনি

    দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত চার বছরের মেয়ে। সংসারে সকলের মুখে অন্ন তুলে দিয়ে কী ভাবে ওই একরত্তির চিকিৎসা বিপুল খরচ সামলাবেন তা ভেবে আতান্তরে পড়েছেন বারাবনির কেস দম্পতি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সদ্য চাকরি হারিয়েছেন উজ্জ্বল কেস ও তাঁর স্ত্রী সোমা কেস। দু’জনই বারাবনির দু’টি হাই স্কুলে কর্মরত ছিলেন। এমতাবস্থায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও, অধিকার ফিরে পেতে লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

    বাঁকুড়ার মেজিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম দিঘলের বাসিন্দা কেস দম্পতি। দু’জনেই ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উজ্জ্বল ২০১৮ সালে বারাবনির দোমোহনি কেলেজোরা হাই স্কুলে কেমিস্ট্রির শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তার পরের বছর ২০১৯ সালে দোমোহনিরই কেলেজোরা বালিকা বিদ্যালয়ে ভূগোলের শিক্ষিকার চাকরি পান তাঁর স্ত্রী সোমা। তাঁদের চার বছরের মেয়ে অভীপ্সাকে নিয়ে ওই এলাকায় বাড়িভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। জটিল কোলন আলসারে ভুগছে অভীপ্সা। বছর কয়েক ধরে হায়দরাবাদে তার চিকিৎসা চলছে।

    প্রতিমাসে চিকিৎসা, পরীক্ষার কারণে কেস দম্পতির খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। দু’মাস অন্তর যেতে হয় হায়দরাবাদে। প্রতিবারই রোগ নির্ণয়, চিকিৎসকের পরামর্শ বাবদ খরচ হয় আরও প্রায় ৫০ হাজার টাকা। পাশাপাশি বৃদ্ধ বাবা–মায়ের যাবতীয় খরচও চালাতে হয় তাঁদের। এমনই পরিস্থিতিতে হঠাৎই চাকরি হারিয়ে এখন তাঁরা কার্যত বিধ্বস্ত। কী করণীয়, বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা।

    বৃহস্পতিবার কেস দম্পতির বারাবনির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল কোলের সন্তানকে নিয়ে মুষড়ে পড়েছেন তাঁরা। উজ্জ্বল বলেন, ‘আমরা দু’জন চাকরি করছিলাম বলে কোনও ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিলাম। আমাদের আর্থিক অবস্থা ততটা স্বচ্ছল নয়। এ বার তো একেবারে অথৈ জলে পড়লাম। মেয়ের চিকিৎসার খরচ কী ভাবে মেটাব তাই ভেবে উঠতে পারছি না।’

    এই চাকরির আগে উজ্জ্বল প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি ও রেলের গ্রুপ ডি পদে চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জেদ ছিল উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়াবেন। তার যে এমন পরিণতি হবে কে জানত। তাঁর স্ত্রী সোমা হতাশায় ডুবে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এক দিকে অসুস্থ মেয়ে অন্য দিকে, বৃদ্ধ বাবা–মা। কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েছি। এ বলে বোঝানো অসম্ভব।’

    গ্রামের স্কুলে দু’জনেই বরাবর ভালো ফল করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। তা হলে কেন তাঁদের জোর করে অযোগ্যদের কালো তালিকায় ফেলা হলো। জীবনে হঠাৎ করে অন্ধকার নেমে আসায় গলায় দলা পাকিয়ে উঠছে কান্না। জানাচ্ছেন, সেই কান্না চেপে নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে লড়াই চালিয়ে যাবেন তাঁরা।

  • Link to this news (এই সময়)