কিল, চড়, ঘুষি খেয়েছেন আমার সহকর্মীরা। আমি খেয়েছি বুকে লাথি। আমার পায়েও ওরা লাঠি দিয়ে মেরেছে। এখনও পায়ে যন্ত্রণা রয়েছে। তাতেও আমরা দমে যাব না। তাই ফিরে এসেছি শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলার মিছিলে।
আমার বুকে পুলিশের লাথি মারার ফুটেজ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার পরে অনেকে ফোন করেছেন। কেমন আছি জানতে চেয়েছেন। সবাইকে বলেছি, এখন এ সব নিয়ে ভাবার সময় নয়। আমাদের দাবি আদায়ের জন্য সামনে দীর্ঘ আন্দোলন পড়ে রয়েছে। এখন পাখির চোখ সে দিকেই। আমি শুধু সবাইকে বলেছি, আমার বুকে লাথি মারা মানে শুধু আমাকে লাথি মারা নয়, গোটা শিক্ষকসমাজের বুকে পুলিশ লাথি মেরেছে।
সে দিন কিন্তু আমরা ডিআই অফিসের ভিতরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভই করছিলাম। হঠাৎ কয়েক জন পুলিশ এসে আমাদের উঠে যেতে বলে। আমরা বলি, আমরা আমাদের কর্মসূচি নিয়ে এখানে এসেছি। রাজ্য জুড়েই ডিআই অফিসে তালা দেওয়া আর ডেপুটেশন দেওয়ার কর্মসূচি চলছে। আমরা এখান থেকে উঠব না। পুলিশ তবু আমাদের উঠে যেতে বলে। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। বাকিটা সংবাদমাধ্যমের ফুটেজে তো সবাই দেখেছেন। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে চেষ্টা করি। পুলিশ আমাদের ধরে ধরে মারতে শুরু করে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগে আমাকে লাথিমারা হয়। পরপর কয়েক বার লাঠির ঘা-ও খেয়েছি।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যে নির্মম ভাবে মারা হয়েছে, তারই প্রতিবাদে এ দিন শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলার মিছিল হয়। আমরা এই বিক্ষোভ-মিছিল থেকে একটা বার্তাই দিতে চাই, আমরা শুধু সম্মানেরসঙ্গে আমাদের চক, ডাস্টারের কাছে ফিরে যেতে চাই। মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছেন, আমাদের স্বেচ্ছাশ্রম দিতে হবে। মানে কি সিভিক শিক্ষক? মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করছি, আপনার দফতরের কোনও মন্ত্রীকে যদি বলা হয়, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে ব্লক সভাপতি হন, উপপ্রধান হন তিনি রাজি হবেন তো? তা হলে আমাদের সামনে কেন সিভিক টিচারের ললিপপ ঝোলাচ্ছেন। আসলে আপনি চাইছেন না অযোগ্যদের বার করতে। কারণ, আমরা তো চাকরির ফর্ম কেনার জন্য ২৪০ টাকা দিয়েছি। আর যারা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছে, তারা ১০ লাখ, ১২ লাখ, ১৫ লাখ টাকা দিয়েছে। কী করে ওদের বাদ দেবেন? দরদ তো ওদের প্রতি থাকবেই।
কিন্তু এই অন্যায় আমরা মেনে নেব না। যে চাকরি আমরা যোগ্যতা দিয়ে অর্জন করেছি, সেটা চুরির জন্য হারাতে পারব না। যত দিন না ঠিক বেতনে, সসম্মানে স্কুলে ফিরছি, আন্দোলন চলবে। এর জন্য যত বার বুকে লাথি খেতে হয় খাব।