কসবায় শিক্ষাভবনে প্রতিবাদ আন্দোলনে পুলিশের লাঠি, ঘুষি জুটেছে তাঁদের জন্য। সেই অপমানের গ্লানি বয়েই বৃহস্পতিবার সকালে নতুন উদ্যমে পথে নামলেন তাঁরা।
ওএমআর শিটের ‘মিরর ইমেজ’ প্রকাশ এবং দ্রুত যোগ্যদের তালিকা প্রকাশের দাবির পাশাপাশি কসবায় পুলিশি নিগ্রহের প্রতিবাদে এ দিন শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মিছিল করে ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ ২০১৬’। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকেই শিক্ষকেরা আসেন। দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে মিছিল শুরু হয়।
আজ, শুক্রবার 'যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ ২০১৬'-এর তরফে এসএসসি ভবন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শুক্রবার বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গেও দেখা করার কথা। ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ বা যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে তাঁদের চাকরি ফেরানোর সম্ভাব্য রাস্তা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় ইচ্ছুক ওই শিক্ষকেরা। এখনও পর্যন্ত খবর, ব্রাত্য কথা বলতে পারেন ওই শিক্ষকদের সঙ্গে।
নিগৃহীত শিক্ষকেরা বলছিলেন, চরম অপমানে রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। কিন্তু চাকরির ‘ন্যায্য অধিকারের’ দাবিতে হাল ছাড়ার প্রশ্ন নেই। পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়েও অমিতরঞ্জন ভুঁইয়া, ধীতীশ মণ্ডলেরা মিছিলে ফেরেন। শিয়ালদহ থেকে বৌবাজার হয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দিকে মিছিল এগোতে এগোতে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান ওঠে। ধীতীশ বলেন, ‘‘পায়ে ব্যথা। কিন্তু শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা হাঁটলাম। কসবার ডিআই অফিসের অপমান ভুলব না। আন্দোলন জোরদার হবে।’’
বেশির ভাগ শিক্ষক কালো ব্যাজ পরেছিলেন এ দিন। কলকাতার মিছিলে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন স্তরের মানুষ। প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে অনেক জেলাতেও। আলিপুরদুয়ারে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনও প্রতিবাদে শামিল হয়। তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি ভাস্কর মজুমদার বলেন, “পুলিশের নির্মম বলপ্রয়োগে খুব কষ্ট পেয়েছি। পুলিশের এই নির্লজ্জ ব্যবহারে আমি নিজেই শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চাইছি। পুলিশকে বলব, অন্য রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনাটি গুলিয়ে ফেলবেন না। এ ক্ষেত্রে অন্তত সংবেদশনশীল হোন।” তাঁর সংযোজন, “এক পুলিশকর্মী এক জন শিক্ষককে লাথি মারছেন, এই দৃশ্য সহ্য করা যায় না।’’
কলকাতায় আলিপুরদুয়ার থেকে এসে মিছিলে হাঁটলেন সংস্কৃতের শিক্ষিকা, চাকরিহারা প্রতিমা রায়। সঙ্গে আড়াই বছরের ছেলে। স্বামী কলকাতা পুলিশে চাকরি করেন। প্রতিমা জানালেন, স্বামীও তাঁদের দাবির সহমর্মী। মিছিলের মুখের ভিড়ে লাঠিধারী এক বৃদ্ধ। শুধু বললেন, ‘‘বয়স হয়েছে তো কী? দরকারে হামাগুড়ি দিয়ে ছেলেমেয়েদের জন্য পথে নামব।’’ আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদী চিকিৎসক দেবাশিস হালদারও এই মিছিলে ছিলেন। চাকরিহারা এক সহকর্মীর হাত ধরে হাঁটছিলেন স্কুল শিক্ষিকা ঝুমা পণ্ডিত।
মিছিলের মধ্যে শিক্ষকদের একাংশের দুশ্চিন্তা, ‘স্যালারি পোর্টালে’ নাম উঠলেও তাঁরা আদৌ বেতন পাবেন তো? ১৬ এপ্রিল দিল্লির যন্তর মন্তরে যোগ্য শিক্ষক অধিকার মঞ্চের শিক্ষকেরা বিক্ষোভ দেখাবেন বলে জানান শিক্ষক মেহেবুব মণ্ডল। তিনি জানান, ১৫০ জনের বিক্ষোভ করার অনুমতি মিলেছে। তবে তার আগে কলকাতায় লাগাতার কর্মসূচি চলবে। সল্টলেকে এক দল শিক্ষক অনশনে বসেছেন। মেহেবুব অবশ্য বলেন, ‘‘অনশন একদম শেষ অস্ত্র। পরিস্থিতি বুঝে পরে আমরা গণ অনশনে বসব।’’ বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ মিছিল ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে পৌঁছয়। প্রতিবাদীদের অবস্থানে ওই তল্লাট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
শিক্ষকদের পুলিশি নিগ্রহের বিরুদ্ধে এ দিন জেলায় জেলায় থানা ঘেরাও করে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালন করে এসইউসি। কোচবিহারের দিনহাটা থানার সামনে সিপিএমের ছাত্র, যুব, মহিলা ও শিক্ষক সংগঠন বিক্ষোভ দেখায়। মাথাভাঙায় সিপিএম ও বিজেপির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মিছিল করে তৃণমূল যুব কংগ্রেস। বিকেলে কোচবিহার শহরে মিছিল করে ‘রাইট টু এডুকেশন ফোরাম’। এসএসসি অভিযানে যোগ দিতে আজ মালদহ ও দুই দিনাজপুরের চাকরিহারারা আসছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম— দুই জেলাতেই থানার সামনে বিক্ষোভ হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের চাকরিহারা শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের একাংশ এখন কলকাতায়। এ দিন নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি, নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, এসএফআই, ডিওয়াইএফআই ঝাড়গ্রাম শহরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। নদিয়ায় একাধিক জায়গায় রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিজেপি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে পুলিশের অনুরোধে অবরোধ ওঠে। বিকেলে বাঁকুড়ার কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ সভা করে এবিটিএ। সিউড়িতে ধিক্কার মিছিল করে সিপিএম। রামপুরহাটে চাকরিহারাদের একাংশও মিছিল করেন।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চাকরিহারাদের সমর্থনে ওয়েবকুটার বেশ কিছু পোস্টার পড়েছিল। বর্ধমানে বিজেপি এবং এসএফআই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। আসানসোলে কোর্ট ঘড়ি মোড়ে বিক্ষোভ দেখায় এআইডিওয়াইও। নিয়ামতপুরে সিপিএম বিক্ষোভ দেখায়।