• শিক্ষাদানে ব্রতী সত্তরোর্ধ্ব কালীসাধন
    আনন্দবাজার | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • পাক ধরেছে চুলে। ভারী কণ্ঠস্বর। তবুও ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে চক-ডাস্টার হাতে সাবলীল সত্তরোর্ধ্ব কালীসাধন মুখোপাধ্যায়। ১৩ বছর আগে অবসর নিয়েছেন তিনি। তবে পড়ানো থেকে অবসর নেননি। ছাত্র-ছাত্রীদের অঙ্ক শেখানোর টানে ৭৪ বছর বয়সেও ঘড়ির কাঁটা ধরে মালদহের লালবাথানি হাই স্কুলে পৌঁছে যান কালীসাধন। স্কুলে একেই শিক্ষকের ঘাটতি। তার উপরে সুপ্রিম কোর্টে নির্দেশে চাকরিচ্যুত হয়েছেন স্কুলের দুই শিক্ষক। স্কুলের পড়াশোনা স্বাভাবিক রাখতে কালীসাধনই ভরসা, দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের।

    শিক্ষকের চাকরি বাতিল নিয়ে উত্তাল এখন রাজ্য-রাজনীতি। তারই মাঝে নিরুত্তাপ হয়ে অষ্টম শ্রেণির ক্লাসে ব্ল্যাক বোর্ডে বীজগণিতের অঙ্ক কষে ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে চলেছেন কালীসাধন। তিনি বলেন, “চাকরি যাওয়া নিয়ে আমার মন্তব্য নেই। তবে শুধু জানি আমার লালবাথানি হাই স্কুলের ছেলেমেয়েদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।” অষ্টম শ্রেণির ফার্স্ট গার্ল আনিকা খাতুন জানায়, “স্যর একটি অঙ্ক একাধিক ফর্মুলায় বুঝিয়ে দিয়ে তা আমাদের কাছে সহজ করে তোলেন।”

    মানিকচকে আমবাগান ঘেরা লালবাথানি গ্রামে ১৯৫৩ সালে গড়ে ওঠে স্কুলটি। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে ৭৫০ জন পড়ুয়া রয়েছে। শিক্ষক ১১জন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্কুলের দুই শিক্ষক ‘চাকরিহারা’। ফলে ন’জনের মধ্যে এক জন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। করণিকের পদও শূন্য। স্কুলের শিক্ষকের শূন্যপদ থাকলেও ঘাটতি মেটাচ্ছেন লালবাথানি গ্রামের কালীসাধন মুখোপাধ্যায়। তিনি ২০১২ সালে অবসর নেন। তবুও স্কুলের রুটিন ধরে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের অঙ্কের ক্লাস নিচ্ছেন। ঘড়ির কাঁটা ধরে নিয়মিতই কালীসাধনবাবু ক্লাসে পৌঁছে যান, দাবি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানিককুমার প্রসাদের। তিনি বলেন, “৩৫বছর ধরে আমি কালীসাধনবাবুর সঙ্গে শিক্ষকতা করছি। প্রথম দিন থেকে ঘড়ির কাঁটা ধরে সঠিক সময়ে ক্লাসে পৌঁছন। তিনি যে অবসর নিয়েছেন, টের পাইনি। তিনি আমাদের মতো শিক্ষকের কাছে অনুপ্রেরণা। তাঁর বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষাদান স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি মেটাচ্ছে।” তাঁর প্রশংসা করে স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি সত্যন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “কালীসাধনের থেকে আমি ছ’বছরের বড়। আমার ক্লাস নেওয়ার ক্ষমতা নেই। কালীসাধন এখনও ক্লাস নিয়ে যাচ্ছেন। পড়ুয়াদের সুবিধা হচ্ছে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)