• ‘চাষার ব্যাটা’-র জীবনাবসান, প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা
    এই সময় | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ‘চাষার ব্যাটা’ রেজ্জাক মোল্লা। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। শুক্রবার সকালে ভাঙড়ের বাকড়ি গ্রামে নিজের বাড়িতেই জীবনাবসান হয় তাঁর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। সক্রিয় রাজনীতি থেকেও দীর্ঘদিন ধরে দূরেই ছিলেন।

    ক্যানিং পূর্ব বিধানসভার অন্তর্গত মিলন বাজারের কাছে বাঁকড়ি গ্রামে রেজ্জাক মোল্লার পৈত্রিক ভিটেবাড়ি। অসুস্থ অবস্থায় গত চার পাঁচ বছর ধরে ওই বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন রেজ্জাক। কিডনির সমস্যাতেও ভুগছিলেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ। দিন তিনেক আগে শ্বাসকষ্ট ও কিডনির সমস্যার কারণে কলকাতার বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল রেজ্জাক মোল্লাকে। তার পর ছাড়া পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। শুক্রবার সকালে সাড়ে ১১টা নাগাদ নিজের পৈতৃক ভিটেতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ দিন তাঁর প্রয়াণের খবর পেয়ে বাড়িতে পৌঁছন স্থানীয় নেতারা। জানা গিয়েছে, এই ভিটের পাশের কবরস্থানেই সমাধিস্থ করা হবে রেজ্জাক মোল্লাকে।

    ১৯৭২ সালে ভাঙড় থেকে প্রথম নির্বাচনে জয়ী হন রেজ্জাক মোল্লা। এর পর ১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় ক্যানিং পূর্ব থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সাল পর্যন্ত সেই কেন্দ্রেরই বিধায়ক ছিলেন। বামেদের দুর্দিনেও হাতছাড়া হয়নি রেজ্জাক মোল্লার এই আসন। বাম আমলে ছিলেন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের মন্ত্রী।

    ২০১৪ সালে CPIM-এর রাজ্য কমিটি রেজ্জাক মোল্লাকে দলবিরোধি কার্যকলাপের অভিযোগে বহিষ্কার করে। এর পর নতুন পার্টি গঠন করেছিলেন ‘চাষার ব্যাটা’ রেজ্জাক। নাম রেখেছিলেন ভারতীয় ন্যায়বিচার পার্টি। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় রেজ্জাকের। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। ভাঙড় থেকে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন ২০১৬ সালে। পান খাদ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের ভার। যদিও ২০২১ সালে বয়সজনিত কারণে রেজ্জাককে আর টিকিট দেয়নি তৃণমূল। খানিকটা দূরত্বও তৈরি হয় দলের সঙ্গে। তার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন। সক্রিয় রাজনীতিতে আর তেমন ভাবে দেখা যায়নি। যদিও নানা ইস্যুতে তাঁর রাজনৈতিক মতামত শোনা গিয়েছে। টানা ৫০ বছর বিধায়ক থাকার বিরল রেকর্ডও ছিল এই নেতার ঝুলিতে।

    রেজ্জাক মোল্লার প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এক্স হ্যান্ডল পোস্টে লেখেন, ‘আমার সহকর্মী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার প্রয়াণে আমি শোকাহত ও মর্মাহত। তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী ছিলেন। তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করতাম, সম্মান করতাম। বাংলার গ্রামজীবন, কৃষি-অরঅথনীতি ও ভূমি সংস্কার বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল সুবিদিত। তাই একসময়ে অন্য ধারার রাজনীতি করলেও মা-মাটি-মানুষের সরকারে তাঁরে মিবিত হয়ে যাওয়া ছিল সহজ ও স্বাভাবিক। তাঁর প্রয়াণে বাংলার রাজনৈতিক জীবনে অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করল। আমি তাঁর পরিবার, অসংখ্য অনুগামী ও শুভানুধ্যায়ীকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।’

    তথ্য সহায়তায়: প্রশান্ত ঘোষ

  • Link to this news (এই সময়)