এই সময়, কোচবিহার: উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) কর্মীদের বেতনে ৯০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। অথচ কোচবিহারের লেডিস স্পেশাল বাস পরিষেবা চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার টাকা করে গচ্চা যাচ্ছে নিগমের। তারপরেও কেন এই ‘সাদা হাতি’ পোষা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দীপঙ্কর পিপলাইয়ের এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘এই বাসটিতে যাত্রী কম হচ্ছে।’
আর্থিক ক্ষতির বিষয়টিও মেনে নিয়েছেন তিনি। গত নভেম্বর মাসে ঘটা করে লেডিস স্পেশাল বাস চালু করেছিল এনবিএসটিসি। কোচবিহার থেকে আলিপুরদুয়ারের মধ্যে এই পরিষেবা চলে। শনি ও রবিবার বাদ দিয়ে সপ্তাহের পাঁচ দিন প্রতিদিন দু’বার করে মোট চারবার বাসটি যাওয়া–আসা করে। ২৫ কিলোমিটার পথে সব মিলিয়ে ভাড়া নেওয়া হয় ২৬ টাকা। বাসটিতে আসন সংখ্যা রয়েছে ৩৭টি। সব সময়েই বাসটি ফাঁকা থাকে। একটি ট্রিপে ৮ থেকে ১০ জনের বেশি যাত্রী হয় না।
নিগমের হিসেব অনুযায়ী, একটি বাস চালাতে তাদের প্রতি কিলোমিটারে শুধু জ্বালানি বাবদ খরচা হয় ২৪ টাকা। সেই হিসেবে প্রতিদিন কোচবিহার–আলিপুরদুয়ারের মধ্যে বাসটি চারবারে ১০০ কিলোমিটার চলাচল করে। তাতে শুধুমাত্র জ্বালানির খরচই হয় প্রায় আড়াই হাজার টাকা। আর বাসের টিকিট বিক্রি করে প্রতিদিন গড়ে আসছে প্রায় এক হাজার টাকার মত। অর্থাৎ প্রতিদিন জ্বালানিতেই দেড় হাজার টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি বাসচালক, কন্ডাক্টরদের বেতন রয়েছে। আর রক্ষণাবেক্ষণের খরচাতো রয়েছেই।
নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় অবশ্য বলেন, ‘গরমের ছুটি পড়লে আপাতত এই বাস চলাচল বন্ধ রাখা হবে। পরবর্তীতে ফের সময়সীমা কিছু পরিবর্তন করে তা চালানো হবে।’ কেন লেডিস স্পেশাল এ যাত্রী হচ্ছে না তার কারণ হিসেবে একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। বাসটি কোচবিহার ছাড়ার পর শুধুমাত্র বাণেশ্বরে একটি স্টপেজ রয়েছে। তাই মাঝের একাধিক জায়গার মানুষজন এই বাসে উঠতে পারছেন না। তা ছাড়া কোচবিহার থেকে সকাল ১০.৩০ মিনিটে যখন বাসটি আলিপুরদুয়ারের উদ্দেশে রওনা হয়, সেই সময়ে চাকুরিজীবী বা পড়ুয়াদের পাওয়া যায় না।
এর পাশাপাশি কোচবিহারে যাঁরা সকালের দিকে আসতে চাইছেন, তাঁদেরও কোনও কাজে লাগছে না। কারণ আলিপুরদুয়ার থেকে প্রথম ট্রিপ বেলা ১২টায় শুরু হয়। কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে কর্মজীবী মহিলার সংখ্যা তুলনামূলক কম। আবার অনেক মহিলা যাত্রীর সঙ্গে পুরুষরা থাকছেন। তাই এক যাত্রায় পৃথক ফল কেউ চাইবেন না। দু’জনে কখনই দু’বাসে উঠবেন না। এই সব নানা কারণেই লেডিস স্পেশালে যাত্রী হচ্ছে না। স্বভাবতই ক্ষতির মুখে পড়ছে নিগম। তারপরও বাস চালিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।