• ‘হেলে ধরতে পারে না, কেউটি ধরতে গেছে’, বাম-দুর্গ পতনের সেই দুপুরে বুদ্ধবাবুকে খোঁচা রেজ্জাকের
    এই সময় | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • লুঙ্গি-ফতুয়া, গলায় গামছা। নিজেকে বলতেন ‘চাষার ব্যাটা’। তিনি মুখ খুললেই হইচই পড়ে যেত। সে বাম আমল হোক বা তৃণমূল জমানা। রেজ্জাক মোল্লার কথার খোঁচায় ছাড় ছিল না কারও। এক সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও ছাড়েননি তিনি। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের পতনের সময় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এক সময়ের রাজনৈতিক সতীর্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে উদ্দেশ্য করে তিনিই বলেছিলেন, ‘হেলে ধরতে পারে না, কেউটি ধরতে গেছে।’ রেজ্জাক মোল্লার মুখে বাংলার অতি প্রাচীন এই বাগধারা সে দিন যেন রাজনীতি-সচেতন বাঙালির কাছে নতুন অর্থ তুলে ধরেছিল। ছাড় পাননি তৎকালীন আরেক মন্ত্রী নিরূপম সেনও। ‘চাষার ব্যাটা’র খোঁচা ছিল, ‘ও নাটের গুরু’। শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং পূর্ব বিধানসভার বাকড়া গ্রামের বাড়িতে প্রয়াত হলেন সেই রেজ্জাক মোল্লা।

    সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন নিয়ে তখন উত্তাল বাংলা। দিকে দিকে কোণঠাসা হওয়া শুরু সিপিএমের। সে সময় প্রধান বিরোধী শক্তি তৃণমূল কংগ্রেস। সেই দলের নেতৃত্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিল-অনশন-আন্দোলনে বাংলা জ্বলছে। দিকে দিকে বিদ্রোহের আগুন। সে আগুন সিপিএমের অন্দরেও ধিকি ধিকি করে জ্বলছিল।

    বামেদের একাধিক সংগঠনে তখন ধাক্কা লাগা শুরু হয়েছে। বিরোধীরা সোচ্চার হওয়ায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন দলেরই কেউ কেউ। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে হারতে হয় সিপিএমকে। সেই সময়ই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে প্রকাশ্যে রেজ্জাক মোল্লা বলেছিলেন, ‘হেলে ধরতে পারে না, কেউটি ধরতে এসেছে।’ যদিও বুদ্ধবাবুর প্রয়াণের খবর মন ভার করেছিল এই রেজ্জাক মোল্লারও।

    সেই সময় রেজ্জাক মোল্লার শরীর একেবারেই ভালো নেই। বিছানায় শুয়ে, চোখ ঘোলাটে। খুব স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না। বলেছিলেন, ‘অনেক স্মৃতি আমাদের। ও আমার থেকে বয়সে ছোট ছিল। মতের অমিলও হয়েছে বিভিন্ন সময়। তবু ১০ বছর তো মন্ত্রী ছিলাম। সব স্মৃতি ঘুরপাক খাচ্ছে মনে, মাথায়।’ আজ চলে গেলেন সেই রেজ্জাক মোল্লাও। বঙ্গ রাজনীতির আরও এক যুগের অবসান।

  • Link to this news (এই সময়)