• শিক্ষককে লাথি মারা SI রিটনের মাথা একটু ‘বেশিই গরম’! বলছেন সহকর্মীরা
    এই সময় | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলনে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছেন তিনি — রিটন দাস।

    কসবা থানার সাব ইন্সপেক্টর রিটন। বুধবার তাঁর ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কসবায় ডিস্ট্রিক্ট ইন্সপেক্টর (স্কুল) বা ডিআই অফিসের ভিতরে বিক্ষোভরত চাকরিহারা শিক্ষকদের একজনকে ডান পা তুলে লাথি মারতে দেখা যায় রিটনকে। তখন থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর ‘কীর্তি’।

    সমাজের প্রায় সর্বস্তরের মানুষের ধিক্কারের শিকার তিনি। তাঁর লাথি সটান গিয়ে পড়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কেওড়াখালি নকুল সহদেব হাইস্কুলের শিক্ষক অমিত রঞ্জন ভুঁইয়ার পেটে। বৃহস্পতিবার অমিত বলেন, ‘আমি কোনও দোষ করিনি। ওই পুলিশকর্মীর শাস্তি চাই।’

    বুধবার লাথি মারার ওই ঘটনার পরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেছিলেন, ‘অন রেকর্ড বলছি, এটা ঠিক হয়নি। বিষয়টা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ বৃহস্পতিবার রাতে, ঘটনার ৩৩ ঘণ্টা পরেও রিটনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানা যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।

    পুলিশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ–এও এ নিয়ে কিছু লেখা নেই। বুধবারের ঘটনায় পুলিশকে প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল এমন দাবি উঠে এসেছে পুলিশকর্তাদের তরফে। যার ফলেই নাকি পুলিশকে পাল্টা ‘অ্যাকশন’ নিতে হয়েছে। তবে, সেই অ্যাকশনের অঙ্গ হিসেবে কেন লাথি মারতে হলো এক পুলিশকর্মীকে, সেই ব্যাখ্যা আসেনি কোনও কর্তার কাছ থেকে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (অপরাধ দমন) রূপেশ কুমার এবং যুগ্ম নগরপাল (সদর) মিরাজ খালিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, তাঁরা কোনও মন্তব্য করেননি। এসএমএস–এর উত্তরও দেননি।

    কে এই রিটন?

    সহকর্মী মহলে তাঁর সম্পর্কে প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘ছেলেটার মাথাটা একটু বেশিই গরম।’ আর তাঁর এই ‘হট–হেডেড’ নেচারের জন্য নাকি এর আগেও বহুবার সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। উদাহরণ একাধিক। তদন্তে শিলিগুড়িতে গিয়ে এক ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে তাঁর গোলমাল হয়।

    সূত্রের খবর, সেখানে বেশ কিছুক্ষণ তাঁকে বসে থাকতে হয়েছিল। তাতে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল তাঁর। অভিযোগ ওঠে দুর্ব্যবহারের। শোনা গিয়েছে, ব্যাঙ্ককর্মীদের নাকি গ্রেপ্তারেরও ভয় দেখানো হয়েছিল। একটি সূত্রের দাবি, রাতে কসবা এলাকায় নাকা চেকিং–এর সময়ে গাড়ি চালকদের সঙ্গে গন্ডগোলের ফলে তাঁকে ইদানীং থানায় আর ‘ফাইল ডিউটি’ দেওয়া হচ্ছিল না।

    অর্থাৎ থানার ডিউটি অফিসারের দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। বদলে তাঁকে বেশিরভাগ সময়েই রাস্তায় নানা ডিউটি করতে হতো। সম্প্রতি আবার ডিউটি অফিসারের কাজে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল মধ্য চল্লিশের ওই ‘ডাকাবুকো’ অফিসারকে।

    কয়েনের অন্যদিকও রয়েছে। আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজের প্রাক্তন ওই ছাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার বাসিন্দা। স্ত্রী–সন্তান নিয়ে থাকেন। রিটন যখন নিউ আলিপুর থানায় ছিলেন, তখন বেহালার বীণা মজুমদারের (৮৮) মামলায় তিনি তদন্তকারী অফিসার ছিলেন। বীণাকে খুন করে তাঁর দেহ তিন বছর ধরে ফ্রিজ়ারে সংরক্ষণ করার অভিযোগ উঠেছিল।

    বীণারই ছেলে কী ভাবে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগসাজশ করেছিলেন, সেই তথ্যপ্রমাণ রিটনই সামনে এনেছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা। এক অভিজাত আবাসনে চুরির ঘটনায় পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে তদন্তের কিনারা করার কৃতিত্বও রয়েছে তাঁর। একসময়ে বেহালা থানাতেও কর্মরত ছিলেন। গত বছরে কসবা থানায় বদলি হয়ে আসেন। অভিযোগ, সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের নালিশ জমা পড়ছিল।

    সর্বস্তরে একটিই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোন পরিস্থিতিতে শিক্ষকের পেটে লাথি মারেন এক অফিসার? কতটা প্ররোচনা পেলে এটা হতে পারে? বুধবারেই সিপি মনোজ বলেছিলেন, ‘তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার আগে–পরের ভিডিয়োও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)