সুপ্রিম কোর্টের চাকরি বাতিলের নির্দেশে মাথায় হাত পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের। কারণ - বাণিজ্য ও কলা বিভাগের পড়াশোনা কোনও মতে ঠেকনা দিয়ে চালিয়ে নেওয়া গেলেও বিজ্ঞান বিভাগের পঠনপাঠন কার্যত শিকেয় উঠেছে।
শোনা যাচ্ছে, প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও অশিক্ষক কর্মচারীর চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর থেকেই রাজ্যের বহু উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে, বিজ্ঞান বিভাগেরই 'কোর সাবজেক্ট' বা মূল বিষয়ের সংখ্যা তুলনায় বেশি। তাছাড়া, সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর মতো অত্যাধুনিক বিষয়েও বিজ্ঞান বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কিন্তু, সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে পড়ানোর মতো দক্ষ শিক্ষক আগেও পর্যাপ্ত পরিমাণে স্কুলগুলির হাতে ছিল না। আর সুপ্রিম নির্দেশের পর তো অবস্থা আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে। এখন তাঁরা কী করবেন? এই প্রশ্ন তুলেই একের পর এক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকারা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের দফতরে লাগাতার ফোন করে চলেছেন বলে দাবি সূত্রের।
বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও সংশ্লিষ্ট সূত্রেরই দাবি হল - প্রধান শিক্ষকদের 'ক্লাস্টার পদ্ধতি'তে বিজ্ঞান বিভাগ চালু রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সংসদের পরামর্শ হল - কাছাকাছি থাকা স্কুলগুলির বিজ্ঞান বিভাগের সমস্ত পড়ুয়াকে কোনও একটি জায়গায়, বড় কোনও ঘরে বসানোর ব্যবস্থা করা হোক। তারপর যে স্কুলগুলিতে বিজ্ঞানের পর্যাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন, তাঁরাই একত্রে একাধিক স্কুলের বাচ্চাদের পড়াক!
কিন্তু, এভাবে জোড়াতাপ্পি দিয়ে কতদিন ক্লাস করানো সম্ভব, ছাত্রছাত্রীদের পক্ষেও অন্য জায়গায় গিয়ে পড়াশোনা করা বা মানিয়ে নেওয়া কতটা সুবিধাজনক এবং সর্বোপরি শিক্ষক ও পড়ুয়ার অনুপাতের নিরিখে আদৌ বিজ্ঞান বিভাগে পঠনপাঠনের মান ধরে রাখা সম্ভব কিনা, সেই সমস্ত প্রশ্ন উঠছে। যার উত্তর আপাতত পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, স্কুলগুলি ভাবছে - যদি আপাতত স্কুলের নিজস্ব তহবিল খরচ করে অস্থায়ী শিক্ষক নিযুক্ত করে বিজ্ঞানের পাঠ দেওয়া যায়! কিন্তু, সেটা কি আইনসিদ্ধ? বর্তমান প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ কি তেমন কিছু করতে পারে? সেটাও স্পষ্ট নয়। সব মিলিয়ে এক চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এমনিতেই, ইদানীংকালে বেসরকারি ঝাঁ-চকচকে শিক্ষাব্যবস্থার দাপটে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার হাঁসফাঁস দশা। অধিকাংশ সরকারি স্কুলে হয় পরিকাঠামো নেই, অথবা পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, অথবা পড়ুয়াই নেই! এমনকী, বিজ্ঞান বিভাগেও সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার ভর্তির সংখ্যা হু হু করে কমছে। বর্তমানে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে উচ্চমাধ্যমিকস্তরে মাত্র ১৪ শতাংশ পড়ুয়া বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে। সুপ্রিম রায়ে চাকরি বাতিলের পর সেটুকুও রক্ষা করা যাবে কিনা, সেই প্রশ্নই তুলছে শিক্ষা মহলের একাংশ।