• পরিশীলিত শহুরে বামপন্থাকে প্রশ্ন করতে ২ বার ভাবেননি চাষার ব্যাটা রেজ্জাক মোল্লা
    হিন্দুস্তান টাইমস | ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম-বিপর্যয়ের পর ‘হেলে ধরতে পারে না কেউটে ধরতে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সেই মন্তব্য এখনও রাজনৈতিক বিতর্কের ঝড় তোলে। ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ভাঙড়ের একদা অবিসংবাদী নেতা আবদুর রেজ্জাক মোল্লা। দীর্ঘ রোগভোগের পর শুক্রবার দুপুরে মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গেই শেষ হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাম রাজনীতির একটা অঙ্ক।

    ১৯৪৪ সালের ৩১ জুলাই জন্ম হয়েছিল রেজ্জাক মোল্লার। বাবা করিম বক্স মোল্লা ছিলেন কৃষিজীবী। বামপন্থী কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ছাত্রজীবনেই বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন রেজ্জাক। উত্তাল সময়ে ভাঙড়সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার মানুষকে কংগ্রেসি শাসনের বিরুদ্ধে একজোট করতে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭২ সালে প্রথম বার বিধানসভা ভোটে জিতে আসেন ক্যানিং পূর্ব থেকে। এর পর ২০২১ সাল পর্যন্ত একটানা বিধায়ক ছিলেন তিনি। বাম জমানায় তিনি ছিলেন ভূমি ও ভূমিরাজস্ব দফতরের মন্ত্রী।

    সিপিএমের রাজনীতিতে রেজ্জাক মোল্লা ছিলেন জ্যোতি বসুপন্থী। এব্যাপারে কোনও রাখঢাকও ছিল না তাঁর। নানা ঘটনা ও মন্তব্যের জন্য বারবার বিতর্কে জড়িয়েছে তাঁর নাম। শহুরে বামপন্থার পরিশীলিত ধারার বিরুদ্ধে লাগাতার বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন তিনি। নিজেকে ঘোষণা করেছেন ‘চাষার ব্যাটা হিসাবে’। বাম মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েও হজে গিয়ে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। তাঁর নানা মন্তব্যও অস্বস্তি বাড়িয়েছে দলের। তবে তাতে দমার পাত্র ছিলেন না তিনি।

    ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশের দিন তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘হেলে ধরতে পারে না, কেউটে ধরতে গেছে।’ সেই মন্তব্য নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল দলের ভিতরে ও বাইরে। দল ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর CPIMএর সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বেড়েছে রেজ্জাকের। ২০১৪ সালে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে দল। ওই বছরই ভারতীয় ন্যায়বিচার পার্টি গঠন করেন রেজ্জাক। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে ২০১৬ সালে তাঁকে সেই দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। ওই বছরই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন রেজ্জাক। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রেজ্জাক মোল্লাকে ভাঙড় থেকে টিকিট দেয় তৃণমূল। দলকে নিরাশ করেননি তিনি। এর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় জায়গাও পান। ২০২১ সাল পর্যন্ত মন্ত্রী ছিলেন তিনি। রেজ্জাক মোল্লা একমাত্র ব্যক্তি যিনি বাম ও তৃণমূল ২ মন্ত্রিসভারই সদস্য ছিলেন।

    ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে রাজনীতি থেকে সরে যান তিনি। তার পর থেকে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন রেজ্জাক মোল্লা।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)