রাতারাতি স্কুলে আসা বন্ধ সুরজিৎ স্যরের। অথচ এই স্যরই হলদিয়া বাবুপুর এগ্রিকালচারাল হাইস্কুলের পড়ুয়াদের প্রাণশক্তি। সব মাস্টারমশাই-ই ভালো, তবে সুরজিৎ হাজরা ছাত্রদের কাছে একটু বেশিই কাছের। তিনি শুধু সায়েন্সের ক্লাসই নিতেন না, একই সঙ্গে নানা রকম অনুষ্ঠান, কুইজ কম্পিটিশন, বিতর্ক সভার আয়োজনেও থাকতেন। পড়ুয়াদের নিয়ে সবসময় হইহই স্যরের। ওরাই স্যরের সবটা জুড়ে। সেই স্যর আর স্কুলে আসবেন না, ভেবেই কেমন যেন একটা হচ্ছে সুদীপ্ত প্রামাণিক, মহাদেব পালদের।
হলদিয়ার বাবুপুর এগ্রিকালচারাল হাইস্কুলের ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষক সুরজিৎ হাজরা। রসায়নে এমএসসি (ফার্স্ট ক্লাস), সঙ্গে বিএড। তার পর শিক্ষকতা শুরু। পড়ানোর পাশাপাশি নানা সাংস্কৃতিক উদ্যোগ নিতেন স্কুলে। জাতীয় বিজ্ঞানদিবসে বিতর্কসভায় পুরস্কৃত হয়েছে এই স্কুল। ছাত্ররাই বলছে, সব কৃতিত্ব স্যরের। তাঁর তত্ত্বাবধানেই ব্লক, জেলা, রাজ্যের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় স্কুলের পড়ুয়ারা বহু পুরস্কার এনেছে।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর মতো কর্মহারা সেই সুরজিৎ স্যরও। শুধু সুরজিৎ হাজরাই নন, এই স্কুলের চার জন শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি নেই আপাতত। স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গসুন্দর ঘড়া বলেন, ‘চার জনই এখন স্কুলে আসছেন না। ফলে স্কুলের পঠনপাঠন চালাতে সমস্যা হচ্ছে। আর এত দিন ধরে কাজ করছি যাঁদের সঙ্গে, হঠাৎ শুনছি তাঁরা আর আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন না। ভিতরে একটা খারাপ লাগাও কাজ করছে।’
স্কুলের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া মহাদেব পাল, অনুসূয়া বেরা, সুদীপ্ত প্রামাণিকরা জানাচ্ছে, সুরজিৎ স্যরের জন্য একটু বেশিই মন খারাপ তাদের। ক্লাসে আসছে, কিন্তু চেনা সেই ডাক আর শুনতে পাচ্ছে না। একই অবস্থা সুরজিৎ হাজরারও। তিনি বলেন, আমারও মন খারাপ। রোজ সকাল সকাল স্নান সেরে তাড়াতাড়ি স্কুলে যাওয়ার রুটিন এখন বাতিল। ওদের নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ছিল। জানি না আর সে সুযোগ হবে কি না। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা, মাস স্ত্রী, ২ বছরের ছেলে আমার। ১৪ লক্ষ টাকা লোন আছে। কী ভাবে কী হবে, কিছুই জানি না।’